ভূঞাপুরে মনোনয়ন নিয়ে মেয়র ও সংসদ সদস্যের বিরোধ, পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুদুল হক আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনিরের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এক সময় তানভীরের মূল শক্তি ছিলেন মাসুদুল। কিন্তু সেই সম্পর্ক এখন সংঘাতে রূপ নিয়েছে।
গতকাল সোমবার টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার আলমনগর ইউনিয়নে মেয়র মাসুদুল হকের গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জন্য সংসদ সদস্যের অনুসারীদের দায়ী করেন মাসুদুল। বর্তমানে এ নিয়ে ভূঞাপুরে উত্তেজনা চলছে।
আজ মঙ্গলবার পাল্টাপাল্টি মিছিল ও পথসভা করেছে দুই পক্ষ। সংসদ সদস্যের পক্ষের সভা থেকে মেয়র মাসুদুল হককে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানানো হয়েছে। অন্যদিকে মেয়র মাসুদুলের পক্ষের মিছিল থেকে সংসদ সদস্য তানভীরের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ২০১৪ সালে টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) সংসদীয় আসনে নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করেন তানভীর হাসান। তখন ভূঞাপুরে তানভীরের মূল শক্তি ছিলেন মাসুদুল হক। তানভীর সংসদ সদস্য হওয়ার পরও তাঁদের মধ্যে উষ্ণ সম্পর্ক ছিল। কিন্তু গত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেওয়াকে কেন্দ্র করে সংসদ সদস্য ও মেয়রের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। পরে জেলা পরিষদ নির্বাচনে সদস্য পদের মনোনয়ন নিয়ে বিরোধ আরও প্রকট হয়। বছরখানেক আগে মেয়র মাসুদুল হক আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনে দলের মনোনয়ন চাওয়ার ঘোষণা দেন। এর পর থেকে তাঁদের বিরোধ ও দূরত্ব বাড়তে থাকে।
সংসদ সদস্যের অনুসারীদের অভিযোগ, মেয়র মাসুদুল গত ইউপি নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের ইন্ধন দিয়েছেন। দল থেকে বহিষ্কৃত ব্যক্তিদের সঙ্গে চলাফেরা করেন তিনি। গতকাল গোপালপুরের আলমনগরে কম্বল বিতরণ করতে যান তিনি। কিন্তু দলীয় নেতা-কর্মীদের তিনি কিছুই জানাননি। ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে পরাজিত হওয়া লুৎফর রহমানকে নিয়ে তিনি কম্বল বিতরণ করেন। এ নিয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে তাঁর বিরোধ দেখা দেয়। তখন পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
ভূঞাপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ওরফে বাবু বলেন, মেয়র মাসুদুল হক দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছেন। তিনি বিশৃঙ্খলা তৈরি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন।
তবে মাসুদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে সংসদ সদস্য বা অন্য কোনো নেতার বিরোধ আছে বলে মনে করি না। কিন্তু সংসদ সদস্য নিজে আমাকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি মনোনয়ন চাইব। এটা তাঁর (সংসদ সদস্য) মাথাব্যথার কারণ হয়েছে। আমি কম্বল বিতরণ করতে গোপালপুরের আলমনগরে গিয়েছিলাম। সেখানে সংসদ সদস্যের অনুসারীরা আমাদের ওপর হামলা করেন।’
মেয়রের গাড়িবহরে হামলা ও বিরোধের বিষয়ে সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে চাই। গোপালপুরের আলমনগরে যে হামলার ঘটনা ঘটেছে, তা দুঃখজনক। স্থানীয় নেতাদের না জানিয়ে মেয়র কর্মসূচি গ্রহণ করায় হয়তো এমনটি হয়েছে। তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ নিয়ে আমার কোনো বিরোধ নেই। তিনিও রাজনীতি করেন, মনোনয়ন চাইতেই পারেন। আরও অনেকেই মনোনয়ন চাইছেন। তাঁরাও শীতবস্ত্র বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। সেখানে কখনো কোনো বিরোধ হয়নি।’
এদিকে আজ সকালে সংসদ সদস্যের অনুসারীরা ভূঞাপুর উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে মিছিল বের করেন। মিছিলটি উপজেলা সদরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পথসভা করে। সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মাসুদুল হক ওরফে টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার জাহিদ, গোবিনদাসী ইউপির চেয়ারম্যান দুলাল হোসেন চকদার, অর্জুনা ইউপির চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
অন্যদিকে মেয়র মাসুদুল হকের অনুসারীরা পৌরসভা এলাকা থেকে মিছিল বের করেন। মিছিলটি কিছুদুর অগ্রসর হওয়ার পর পুলিশ বাধা দেয়। পরে সেখানে অনুষ্ঠিত পথসভায় বক্তব্য দেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খাইরুল ইসলাম, নিকরাইল ইউপির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।