রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রেলপথ ছাড়ল, ট্রেন চলাচল শুরু
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ-সংলগ্ন ঢাকা-রাজশাহী রেলপথ থেকে সরে গেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। রেলপথ ছেড়ে শিক্ষার্থীরা চলে যাওয়ার পর আবার ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে শিক্ষার্থীরা রেলপথে অবস্থান নেওয়ায় রাজশাহীর সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল।
রোববার রাত ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে রেলপথে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীরা চলে যান। শিক্ষার্থীরা চলে যাওয়ার পরে রেললাইন মেরামত করা হয়। পরে রাত ১২টা ১০ মিনিট থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক আবদুল করিম।
এর আগে রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের মহাসড়ক থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রেলপথের ওপর অবস্থান নেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন। এর আগে শনিবার রাতেও রেলপথ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে সাড়ে তিন ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল।
বোয়ালিয়া জোনের উপপুলিশ কমিশনার আরেফিন জুয়েল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র রেললাইনে আগুন দিয়েছে। কিন্তু এখানে এসে কোনো ছাত্র দেখতে পাইনি। তাঁরা লাইনের ওপরে কাঠে আগুন দিয়েছিল। আমরা নিভিয়ে দিয়েছি। রাতে নিরাপত্তার জন্য সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, যাতে এ ঘটনা আর না ঘটে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া আমরা ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রবেশ করব না।’
শিক্ষার্থীরা রেলপথে অবস্থান নেওয়ায় বিভিন্ন স্টেশনে বেশ কয়েকটি ট্রেন আটকা পড়ে। রাত ১১টা ৪০ মিনিটে ঢাকাগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে ছিল। তিতুমীর এক্সপ্রেস ট্রেনটি আবদুলপুর স্টেশনে, মধুমতী এক্সপ্রেস ট্রেনটি হরিয়ান স্টেশনে, সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঈশ্বরদী স্টেশনে আটকে ছিল।
গত শনিবার বগুড়া থেকে বাসে করে রাজশাহীতে আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। বাসের আসনে বসা নিয়ে তাঁর সঙ্গে ওই বাসের চালক ও সহকারীর বচসা হয়।
পরে বাসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর ফটকে পৌঁছালে তাঁদের সঙ্গে আবার বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান ওই শিক্ষার্থী। এ সময় স্থানীয় এক ব্যক্তি ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে উভয়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। পরে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে ওই দোকানদারের ওপর চড়াও হলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন। তখন শিক্ষার্থীরাও তাঁদের পাল্টা ধাওয়া দেন। এরপর থেকে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো বিনোদপুর এলাকা।
স্থানীয় ব্যক্তিদের হামলা-সংঘর্ষ ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের শেলে আহত হয়েছেন দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। তাঁদের মধ্যে এখনো ৯০ জন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) আছেন এক শিক্ষার্থী। তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। রোববার দুপুরে তাঁর লাইফ সাপোর্ট খুলে দেওয়া হয়। ছয়জন শিক্ষার্থীর চোখে রাতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।