আদালত অবমাননার সাজা শেষে কারামুক্ত দিনাজপুরের বরখাস্ত হওয়া মেয়র জাহাঙ্গীর
দিনাজপুর পৌরসভার সাময়িক বরখাস্ত হওয়া মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম কারামুক্ত হয়েছেন। আদালত অবমাননার দায়ে এক মাস সাজাভোগ শেষে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে জেলগেট দিয়ে বাইরে বের হন তিনি। তবে এ সময় তাঁর দলের কোনো নেতা-কর্মীকে সেখানে দেখা যায়নি।
সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক। টানা তৃতীয় মেয়াদে দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। আজ সকালে কারাগারের প্রধান ফটকে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মোটরসাইকেলে দলীয় এক ব্যক্তি দ্রুত জাহাঙ্গীরকে নিয়ে যান। এ সময় উপস্থিত সাধারণ মানুষের উদ্দেশে হাত তুলে শুভেচ্ছা জানান তিনি। জাহাঙ্গীরের পরনে ছিল লুঙ্গি ও নীল রঙের টি-শার্ট।
আপিল বিভাগের বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিমকে নিয়ে ইউটিউবে জাহাঙ্গীরের এক বক্তব্যের সূত্রে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের চার আইনজীবী। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা মামলায় হাইকোর্টের রায়কে কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীর ওই বক্তব্য দেন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ আগস্ট আপিল বিভাগ জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার নোটিশ ইস্যু করেন। পাশাপাশি ২৪ আগস্ট তাঁকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
নির্ধারিত দিনে আদালতে হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করলে আপিল বিভাগ গত ১২ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য করেন। পরে ওই দিন আদালতে হাজির হলে জাহাঙ্গীরকে এক মাসের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও সাত দিনের কারাদণ্ড দেন আপিল বিভাগ। পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে দিনাজপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৮ অক্টোবর দিনাজপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন জাহাঙ্গীর। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমকে ৩১ অক্টোবর দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়ে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মো. আবদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯-এর ধারা ৩১(১) অনুযায়ী সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি আদালত অবমাননার দায়ে দণ্ডিত। পৌরসভা বা রাষ্ট্রের হানিকর কার্যকলাপে জড়িত থাকা, নৈতিক স্খলন, অসদাচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে তাঁকে এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, এর আগে জাহাঙ্গীর আরও দুবার বরখাস্ত হয়েছেন। ২০১৮ সালে ভিজিডির চাল কম দেওয়ার দায়ে এক মামলায় তিনি জেলে যান। সেই সময় তাঁকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ সাময়িক বরখাস্ত করেছিল। এ মামলায় তিনি জামিনে আছেন। ২০২২ সালে পৌরসভার অর্থ আত্মসাৎ, নিয়োগে অনিয়মসহ পাঁচটি বিষয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন কাউন্সিলররা। তদন্ত সাপেক্ষে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় স্থানীয় সরকার বিভাগ তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করেছিল। দুবারই তিনি হাইকোর্টে রিট করে পদে ফেরেন।