ঈদের ছুটিতে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে মানুষের ঢল
ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের দর্শনার্থীর সংখ্যা কয়েক দিন আগেও হাতে গোনা যেত। এখন সেই স্থান লোকে লোকারণ্য। ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই দলে দলে ছুটছেন পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে। গত বৃহস্পতিবার ঈদের দিন ও শুক্রবার ঈদের দ্বিতীয় দিন বিকেলে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে নানান বয়সী মানুষের ঢল দেখা গেছে। ঈদের তৃতীয় আজ শনিবার সকাল থেকেও মানুষের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে।
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার মধ্যে পাহাড়পুরের অবস্থান হলেও জয়পুরহাট জেলা শহর থেকে দূরত্ব অনেক কম। জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার জামালগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে পাহাড়পুরের দূরত্ব মাত্র পাঁচ কিলোমিটার। জয়পুরহাট রেলস্টেশন থেকে পাহাড়পুর ১০ কিলোমিটার। নওগাঁ শহর থেকে পাহাড়পুরের দূরত্ব ৩২ কিলোমিটার। এ কারণে লোকজন রেলপথে জয়পুরহাট এসে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে যাচ্ছেন। সড়কপথেও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ট্রাফিক পুলিশ পাহাড়পুরে যেতে এবার যানজটও নেই। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের ভেতরে বিভিন্ন পয়েন্টে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যরা নিরাপত্তার কাজ করছেন। এতে দর্শনার্থীরা ভেতরে ঘুরতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ বোধ করছেন। এবার ঈদুল ফিতর ও পয়লা বৈশাখের ছুটিতে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে রেকর্ড পরিমাণ দর্শনার্থী হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার জাদুঘর কর্তৃপক্ষ।
গতকাল বিকেলে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে গিয়ে দেখা যায় দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। অনেকেই পরিবার–পরিজন, বন্ধুবান্ধব নিয়ে পাহাড়পুর ঘুরতে এসেছেন। তাঁদের কেউ গ্রুপ ছবি, কেউবা সেলফি তুলছেন। নিরাপত্তাব্যবস্থাও ছিল চোখে পড়ার মতো। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার ঈদের ছুটিতে যেন মানুষের মেলায় পরিণত হয়েছে। বাস-ট্রাক, মাইক্রোবাস-ইজিবাইক ও ভটভটি নিয়ে দর্শনার্থীরা আসছেন। অনেকে যানবাহনে মাইক লাগানো হয়েছে। এসব মাইকে উচ্চ শব্দে গান বাজছিল। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের ভেতরে দর্শনার্থী ঢোকার দুটি ফটক রয়েছে। জাদুঘরসংলগ্ন পূর্ব দিকে ফটকটি এক নম্বর ও বাজার থেকে আসার উত্তর দিকে ফটকটি দুই নম্বর ফটক। ভিড়ে বিড়ম্বনা এড়াতে দুটি ফটকেই বাঁশ দিয়ে নারী-পুরুষের জন্য আলাদা লাইন করা হয়েছে। দুটি ফটকের কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে দর্শনার্থীরা সুশৃঙ্খলভাবে ভেতরে ঢুকছেন।
পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার ঈদের ছুটিতে যেন মানুষের মেলায় পরিণত হয়েছে। বাস-ট্রাক, মাইক্রোবাস-ইজিবাইক ও ভটভটি নিয়ে দর্শনার্থীরা আসছেন। অনেকে যানবাহনে মাইক লাগানো হয়েছে। এসব মাইকে উচ্চ শব্দে গান বাজছে।
রাজশাহীর পুঠিয়ার গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে এসে পাহাড়পুরে পরিবার নিয়ে এসেছেন শফিকুর রহমান। তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানির কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘পরিবারের সদস্যদের কথা দিয়েছিলাম, এবার গ্রামের বাড়িতে গেলে দূরে কোথাও ঈদের দ্বিতীয় দিন বেড়াতে যাব। পরিবারের সবাই পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার বেড়াতে যাওয়ার সায় দিয়েছিলেন। ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার এসেছি।’
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা সদরের বাসিন্দা ফারাহ হোসাইন বলেন, ‘আমি ঢাকায় চাকরি করি। আমার পরিবার গ্রামের বাড়িতে থাকে। কয়েক মাস আগে ছুটিতে যখন বাড়িতে এসেছিলাম, তখন আমার পাঁচ বছরের ছেলে পাহাড়পুর জাদুঘর দেখার বায়না ধরেছিল। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসে ছেলেকে পাহাড়পুর জাদুঘর দেখাতে নিয়ে যাব বলে কথা দিয়েছিলাম। এ কারণে শুধু ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে সকালে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে এসেছি।’
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার বাসিন্দা ওমর ফারুক বলেন, ‘আমরা ছয় বন্ধু ইজিবাইক নিয়ে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে এসেছি। জয়পুরহাট থেকে পাহাড়পুরের দূরত্ব খুবই কম। আবার যোগাযোগব্যবস্থাও ভালো। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে এসে আমরা সবাই খুবই আনন্দ পেয়েছি।’
পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার জাদুঘরের কাস্টডিয়ানের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ঈদুল ফিতরের ছুটিতে ১২ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছিল। এবার টিকিটের মূল্যে ১০ টাকা বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য টিকিট লাগে না। এবার ঈদের দিনে ২০ হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছে। ঈদের দিনে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী এসেছিল ৫ হাজার। সব মিলে এক দিনে ২৫ হাজার দর্শনার্থী ছাড়িয়ে যায়। ঈদের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার দর্শনার্থী একটু কম হয়েছে। তবে রাজস্ব আয় গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি আসবে।
পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার জাদুঘরের কাস্টডিয়ান ফজলুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ঈদে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে যানবাহনের চাপ থাকত। এ কারণে আগে থেকে পাহাড়পুর এলাকা যানজটমুক্ত রাখার কথা নওগাঁ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে জানানো হয়েছিল। এবার দর্শনার্থীরা স্বাচ্ছন্দ্যে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার দর্শন করছেন। এবার ঈদ ও পয়লা বৈশাখের ছুটিতে রেকর্ড পরিমাণ দর্শনার্থী আসবেন বলে তাঁর আশা।
ট্যুরিস্ট পুলিশের নওগাঁ জোনের পরিদর্শক কিরণ কুমার রায় প্রথম আলোকে বলেন, পর্যটকেরা যাতে নির্বিঘ্নে ভ্রমণ করতে পারেন, সে জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ নওগাঁ জোনের পক্ষ থেকে সাদাপোশাকে ও পোশাকে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা করা হয়েছে।