লুটপাটকারীদের ধাওয়া দিয়ে গাড়িতে আগুন পীরের অনুসারীদের, এলাকায় উত্তেজনা

মুর্শিদপুর পীরের দরবারে হামলা ও লুটপাটের ঘটনার পর পীরের অনুসারীরা লুটপাটকারীদের গাড়িতে আগুন দেন। শুক্রবার দুপুরে সদর উপজেলার লছমনপুর এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

শেরপুর সদর উপজেলার লছমনপুর এলাকায় খাজা বদরুদ্দোজা হায়দার ওরফে দোজা পীরের দরবারে (মুর্শিদপুর পীরের দরবার) হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় আবার উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। গত মঙ্গলবার প্রথম দফায় হামলার সময় সংঘর্ষে আহত একজনের মৃত্যুর জের ধরে গতকাল বৃহস্পতিবার আবার দরবারে হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে দরবারে লুটপাট চালাচ্ছিল একটি গোষ্ঠী। আজ শুক্রবার দুপুরে পীরের অনুসারীরা লুটপাটকারীদের ধাওয়া দিলে এ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় লুটপাটের মালামাল নিতে আসা কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

এর আগে গত মঙ্গলবার ভোরে মুর্শিদপুর পীরের দরবারে প্রথম হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। তখন হামলাকারীদের প্রতিরোধ করতে গেলে সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৩ জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে হাফেজ উদ্দিন (৪০) নামের এক কাঠমিস্ত্রি বুধবার ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল দুপুরে তাঁর জানাজার নামাজের পর কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ লোক দরবারে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে ব্যাপক লুটপাট চালায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিক্ষুব্ধ জনতা গতকাল দরবারের বিভিন্ন স্থাপনা আগুন দেওয়ার পাশাপাশি মূল্যবান আসবাব, গবাদিপশু, কাঠ, টিন, ধান-চালসহ টাকা লুটপাট করে নিয়ে যায়। এ সময় দরবারের বিভিন্ন স্থানের গাছও কেটে ফেলে। এতে পুরো দরবার শরিফ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। আজ সকালেও লুটপাট অব্যাহত থাকে এবং লুটপাটকারীরা কয়েকটি গাড়িতে লুটের মালামাল বোঝাই করতে থাকে। খবর পেয়ে পীরের কয়েক শ অনুসারী জোটবদ্ধ হয়ে দুপুরে দরবারে ঢুকে তাঁদের ধাওয়া করেন। পরে লুটের মালামাল বোঝাই কয়েকটি গাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন। বিকেলে পীরের অনুসারীরা দরবার ত্যাগ করেন।

মুর্শিদপুর পীরের দরবারে হামলা ও লুটপাটের ঘটনার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক অবস্থান। শুক্রবার বিকেলে সদর উপজেলার কুসুমহাটী এলাকায় শেরপুর-জামালপুর সড়কে
ছবি: প্রথম আলো

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মুর্শিদপুর পীরের এক অনুসারী প্রথম আলোকে বলেন, দরবারে হামলার ঘটনায় তাঁরা চরমভাবে ব্যথিত হয়েছেন। দরবারের মূল্যবান সম্পদ ধ্বংস করায় অনেক ক্ষুব্ধ হয়েছেন। আজ লুটপাট প্রতিরোধে তাঁরা দরবারে গিয়েছিলেন। এ সময় লুটপাটকারীদের কয়েকটি যানবাহনে আগুন দেন ক্ষুব্ধ অনুসারীরা।

আরও পড়ুন

এদিকে পীরের অনুসারীদের দরবারে ফেরার খবর পেয়ে বিক্ষুব্ধ জনতার মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তাঁরা পীরের অনুসারীদের বিভিন্ন স্থানে খুঁজতে শুরু করেন। আতঙ্কে শেরপুর-জামালপুর সড়কের কুসুমহাটী বাজার এলাকার দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে জেলা সদর থেকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দরবার ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন। সন্ধ্যা সাতটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাঁরা ওই এলাকায় টহল দিচ্ছিলেন।

শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. মিজানুর রহমান ভূঁঞা সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আছে। ময়মনসিংহ রেঞ্জ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আবু সায়েম ক্ষতিগ্রস্ত দরবার শরিফ ও আশপাশ এলাকা পরিদর্শন করেছেন। কাঠমিস্ত্রি হাফেজ উদ্দিনের মৃত্যু ও দরবারে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কেউ অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন