‘দেশকে অস্থিতিশীল করে বিএনপিকে আতঙ্কে রাখতেই পঞ্চগড়ের হামলা’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘আমরা মনে করি পঞ্চগড়ে যে হামলার ঘটনাটি ঘটেছে, এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সুপরিকল্পিত। নির্বাচনের আগে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য, বিশেষ করে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল বিএনপিকে আতঙ্কের মধ্যে রাখার জন্য এ হামলা করা হয়েছে।’
বুধবার বিকেলে পঞ্চগড় জেলা বিএনপির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে দুপুরে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল জেলা শহরের উপকণ্ঠে আহম্মদ নগর ও শালশিড়ি এলাকায় হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বাড়িঘর পরিদর্শন করে।
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, তাঁরা সরকারের অনুমতি নিয়েই বার্ষিক জলসার আয়োজন করেছিলেন। যখন তাঁদের বাড়িঘরে হামলা হাচ্ছিল, তখন তাঁরা প্রশাসনকে জানিয়েছেন। পুলিশ সেখানে তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দৃশ্য দেখেছে। কিন্তু একজন ব্যক্তিকেও রক্ষা করতে আসে নাই। ডিসি-এসপি এসে দুষ্কৃতকারীদের খানিকটা প্রতিরোধ করেছেন। এরই মধ্যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গেছে। এসব আলামত দেখে মনে হয়, সবকিছুর মূল যে কারণ সেটি হলো দেশে গণতন্ত্র নেই, আইনের শাসন নেই, মানুষের কোনো অধিকার নেই। মানবতা প্রতিদিনই লঙ্ঘিত হচ্ছে।’
বাংলাদেশ মানবতাবিরোধী, মানবাধিকারবিরোধী রাষ্ট্রযন্ত্র হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছে দাবি করে বিএনপির কেন্দ্রীয় এই নেতা বলেন, এ ঘটনায় এত অপরাধী, সবাই সবাইকে চেনে, কিন্তু ধরা হচ্ছে শুধু বিএনপি কর্মীদের। বিএনপি কর্মীরা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। একেকটা মামলায় ১৫ থেকে ২০ জনের নাম আর দুই-তিন হাজার অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। ফলে বিএনপির নিরীহ ও শান্তিপ্রিয় মানুষ আজকে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা এ ঘটনার রাজনীতিকরণের জন্য এখানে আসিনি। আমরা জেনেছি, পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও বর্তমান সরকারের রেলমন্ত্রী দুই দিন আগে ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িঘর দেখতে গিয়েছেন, সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সদস্যরা মন্ত্রীর সামনেই হামলাকারীদের কয়েকজনের নামও বলেছেন। তাঁরা মন্ত্রীর সঙ্গে সেখানে গেছেন বলে জেনেছি। আমরা আশা করেছিলাম, প্রশাসন দ্রুত তাঁদের গ্রেপ্তার করবে।’
এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন না করার সমালোচনা করে বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘সেখানে প্রাণহানি ঘটেছে, বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অথচ কোনো তদন্ত কমিটি হয়নি। প্রশাসনের এমন ভূমিকার দেখে আমরা দুঃখিত। আমরা আশা করব, দেরিতে হলেও সরকার একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনার কারণ উদ্ঘাটিত করবে এবং প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনবে।’
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ঢাকাসহ অন্যান্য অঞ্চলে ধীরে ধীরে বোমবাজির খবর আমরা পাচ্ছি। প্রশাসনের জবাবদিহি না থাকায় এ ধরনের তাণ্ডব চলছে। সরকারি দলের ছত্রচ্ছায়ায় এ ধরনের তাণ্ডব চালানো হচ্ছে। অথচ তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।’
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লা, বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরহাদ হোসেন (আজাদ), জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
পঞ্চগড় শহরের উপকণ্ঠে আহমদনগর এলাকায় আহমদিয়া জামাতের জলসা বন্ধের দাবিতে গত শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর পঞ্চগড় শহরের বিভিন্ন মসজিদ থেকে মিছিল বের করা হয়। মিছিল নিয়ে বিক্ষোভকারীরা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে সমবেত হন। সেখান থেকে তাঁরা মিছিল নিয়ে করতোয়া সেতুর দিকে যেতে চাইলে পুলিশ তাঁদের থামিয়ে দেয়। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা ছড়িয়ে–ছিটিয়ে শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে ঢুকে পড়েন।
কিছুক্ষণ পর চৌরঙ্গী মোড়সংলগ্ন সিনেমা হল সড়ক থেকে একদল বিক্ষোভকারী মিছিল নিয়ে এসে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। তখন পুলিশ ধাওয়া দিলে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। একদল বিক্ষোভকারী আহমদনগর এলাকায় গিয়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের শতাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত দফায় দফায় এ পাল্টাপাল্টি হামলা চলে। এ ঘটনায় দুই তরুণ নিহত, পুলিশ, সাংবাদিকসহ শতাধিক মানুষ আহত হন।