জঙ্গিগোষ্ঠীর অর্থায়নে কেএনএফ সামরিক শক্তি বাড়িয়েছে: র‍্যাব

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক খন্দকার আল মঈন
ছবি: প্রথম আলো

জঙ্গিগোষ্ঠী জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দিল শারক্বীয়ার অর্থায়নে বান্দরবানের নতুন সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) তাদের সামরিক শক্তি বাড়িয়েছে। কেএনএফ এখনো শারক্বীয়ার জঙ্গিদের লুকিয়ে রাখছে, খাবার সরবরাহ করছে এবং প্রশিক্ষণ প্রদানসহ বিভিন্নভাবে সহায়তা অব্যাহত রেখেছে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বান্দরবান জেলা পরিষদের মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) এসব তথ্য জানিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক খন্দকার আল মঈন।

গতকাল বুধবার বান্দরবানের রোয়াংছড়ি ও থানচির দুর্গম এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাঁচ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে মূলত এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, র‍্যাব ও সেনাবাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে জঙ্গিরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলার দুর্গম পাহাড়ে পালিয়ে আছেন। তাঁরা আত্মগোপনে থেকে প্রতিনিয়ত স্থান পরিবর্তন করছেন। গ্রেপ্তার জঙ্গিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে নিশ্চিত হওয়া গেছে, কেএনএফের প্রধান নাথান বম, কথিত সামরিক কমান্ডার ভাংচুংলিয়ান বম, সলোমন বম, লালজং মুই বম ওরফে মাওয়াইয়া, লালমুন থিয়াল ওরফে চির চির ময় বমসহ শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনায় কেএনএফ সদস্যরা জঙ্গিদের সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন

কেএনএফের সদস্যসংখ্যা ও শক্তি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে র‍্যাবের সহকারী পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, জঙ্গিগোষ্ঠী জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দিল শারক্বীয়ার অর্থায়নে কেএনএফ সদস্য ও সামরিক শক্তি বাড়িয়েছে। জঙ্গি সদস্যদের তারা প্রশিক্ষণ প্রদান করে। বিনিময়ে কেএনএফের সংগঠন পরিচালনার জন্য জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে প্রতি মাসে ৩ থেকে ১০ লাখ টাকা পায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের আগে জঙ্গিদের টাকায় নাথান বম ঢাকায় অবস্থান করতেন। তবে নাথান বম বর্তমানে কোথায় আছে, সে বিষয়ে ধারণা নেই। বর্তমানে কেএনএফের প্রায় ২০০ সদস্য আছে।

বান্দরবানে গ্রেপ্তার হওয়া জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়ার পাঁচজন সদস্য। আজ বেলা সোয়া ১১টায় র‍্যাবের বান্দরবান কার্যালয়ের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গত বছরের ৯ অক্টোবর থেকে কেএনএফ ও শারক্বীয়া জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে। ওই অভিযানে ২০ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১২ জন জঙ্গি ও ১৪ জন কেএনএফের সশস্ত্র সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

কেএনএফের সূত্রগুলো জানায়, রুমা উপজেলা সদর বাজারের বাসিন্দা নাথান বম ২০১২ সালে কুকি-চিন ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশনস (কেএনডিও) নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। সেটি পরবর্তী সময়ে কেএনএফ নামে সশস্ত্র সংগঠনে রূপান্তর করে সদস্য সংগ্রহ করেন। ২০২১ সালে অর্থের বিনিময়ে কেএনএফের গোপন আস্তানায় জঙ্গিগোষ্ঠী শারক্বীয়ার সদস্যদের প্রশিক্ষণ প্রদানের চুক্তি করেন। জঙ্গিগোষ্ঠীর অর্থায়ন পেয়ে কেএনএফ প্রথমে রুমা, পরে রোয়াংছড়ি ও রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়নে গোপন আস্তানা গড়ে তোলে ও সশস্ত্র সদস্য সংগ্রহ করে। ওই গোপন আস্তানাগুলোতে সমতল থেকে আসা জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।