‘কাম নাই, হামরা ভালো নাই’

কারফিউ শিথিল হলেও কাজ পাচ্ছেন না দিনমজুররা। শুক্রবার সকালে রংপুর শহরের কেরানীপাড়া চারমাথায় শ্রমের হাটে
ছবি: মঈনুল ইসলাম

শ্রাবণের আকাশ হলেও প্রচণ্ড খরতাপ বইছে। রোদের কারণে আকাশের দিকে তাকানোই যায় না, চোখ বন্ধ হয়ে আসে। সকালেও শরীর দিয়ে ঘাম ঝরছে। এর মধ্যেই দিনমজুরেরাও বেরিয়েছেন কাজের সন্ধানে। একে তো নিত্যপণ্যের দাম চড়া, তার ওপর দিনমজুরদের কাজের সংকট। কারও কাজ মিলছে, কারও মিলছে না। আজ শুক্রবার রংপুর নগরের তিনটি শ্রমের হাটে এমন দৃশ্য দেখা যায়।

রংপুর শহরের কেরানীপাড়া চারমাথায় দিনমজুরদের শ্রমের হাটে কথা হলো অনেকের সঙ্গে। তিন কিলোমিটার দূরের যুগিটারি এলাকা থেকে সাইকেলে করে ডালা-কোদাল নিয়ে ছুটে এসেছেন আরিফ হোসেন (৪০) নামের দিনমজুর। তাঁর বাড়িতে স্ত্রী, সন্তানসহ পাঁচ সদস্য। তিনি বলেন, ‘কাম নাই, হামরা ভালো নাই। এই কয় দিন গন্ডগোলের কারণে শহরোত আসিপার পাই নাই। এই সময় অ্যাটে কাজ কাম কমি গেইছে। এতগুলো বাড়িত খাওয়াইয়া, কেমন করি যে সংসার চলবে। ধার-দেনা করিয়া আর কত চলা যায়?’

আরও পড়ুন

সাইকেলের মধ্যে কাজের সরঞ্জাম রেখে বসে আছেন ১০-১২ জন দিনমজুর। সবার চোখেমুখে বিষণ্নতার ছাপ। এক বেলা কাজ জুটবে কি না, এই দুশ্চিন্তা তাঁদের মাথায় ভর করেছে। সাইকেল পাশে রেখে হাত গুঁটিয়ে বসে আছেন তাঁরা।

চার কিলোমিটার দূরের উত্তম এলাকা থেকে কাজের সন্ধানে ছুটে এসেছেন দিনমজুর আশুতোষ রায় (৪২)। সংসারে রয়েছে স্ত্রী–সন্তানসহ চারজন। তিনি বলেন, ‘এক দিন–দুই দিন কাজ না করলেও খাবারের অসুবিধা হয় না। শহরোত গন্ডগোলের কারণে সাত দিন আসা হয় নাই। একেবারে বসি বসি থাকা। জমা টাকাও শেষ। কাজ না জুটলে অ্যালা কেমন করি চলবে, সেই চিন্তা করতাছি। ধার-দেনা ছাড়া উপায় নাই।’

শহরের ব্যবসাপ্রধান এলাকা বেতপট্টিতে সকাল আটটা থেকে নয়টা পর্যন্ত অবস্থান করে দেখা গেল, শ্রমের বাজারে বিচ্ছিন্নভাবে ১৫ জনের মতো শ্রমিক বসে আছেন; কিন্তু অন্য দিনের মতো তাঁদের কাজের ডাক নেই। শুধু শুধু বসে থাকতে হচ্ছে। শহরের পরিস্থিতি সাত-আট দিন পর একটু ভালো হওয়ায় দিনমজুরেরা শ্রমের হাটে ছুটে এসেছেন কাজের সন্ধানে। কিন্তু শহরের বাসাবাড়ি থেকে ডাক আসছে না তাঁদের।

ডালি-কোদাল নিয়ে কাজের সন্ধানে আসা কথা হলো নির্মল চন্দ্রের সঙ্গে। শহরের পরিস্থিতি ভালো না থাকায় গত এক সপ্তাহ তিনি বাসায় বসে ছিলেন। এখন গ্রামেও কাজ নেই। শহরে বাসাবাড়িতে বালু ও ইট পরিবহনের কাজ ছিল। শহরে গন্ডগোল হওযায় এখন সেটিও নেই বলে তিনি জানালেন। নির্মল চন্দ্র বলেন, ‘কাজ নাই, হামরা ভালো থাকি কেমন করি। কাঁচা মরিচের কেজি ৩০০ টাকা। সবজির বাজারে তো আগুন। কোনো জিনিসোত হাত দেওয়া যায় না।’

শহরের ধাপ শিমুলবাগ এলাকায় শ্রমের হাটেও একই চিত্র দেখা গেল। এখানে সকাল থেকে দিনমজুরেরা বসে আছেন। সকাল ১০টা পর্যন্ত কাজ জোটেনি অনেকের। শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে তাঁরা এই শ্রমের হাটে আসতে পারেননি বলে দিনমজুরেরা জানালেন। কেমন করে সংসার চলছে জানতে চাইলে নূর ইসলাম (৪৫) নামের একজন দিনমজুর বলেন, ‘আইজো কারও কাছোত হাত পাতা লাগবে।’