ছেলের গতিবিধিতে পরিবর্তন দেখলেও জঙ্গি কি না বুঝতে পারেননি বাবা

ঘিরে রাখা বাড়ি থেকে ১০ জনকে আটক করে নিয়ে যাচ্ছেন সিটিটিসির সদস্যরা। গত শনিবার সকালে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী পূর্ব টাট্রিউলি গ্রামে
ছবি: কল্যাণ প্রসূণ

জঙ্গি সন্দেহে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার ‘জঙ্গি আস্তানা’ থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন পাবনার শাপলা বেগম (২২) ও তাঁর দুই শিশুকন্যা। ১৫ দিন আগে স্বামী মাহতাব হোসেনের (৩৫) সঙ্গে হুট করে নিখোঁজ হন শাপলা। এর পর থেকে তাঁরা স্বজনদের সঙ্গেও কোনো যোগাযোগ রাখেননি। তাঁরা মাঝেমধ্যে কাজের কথা বলে উধাও হতেন। রোববার স্বজন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

মাহতাব-শাপলা দম্পতির বাড়ি পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামে। মাহাতাবের বাবার নাম হাবিবুর মণ্ডল। তাঁরা বাবা-ছেলে দুজনই পেশায় ভ্যানচালক।

আরও পড়ুন

হাবিবুর মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, তিনি গরিব মানুষ। ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান। ছেলের গতিবিধিতে পরিবর্তন দেখেছেন। তবে জঙ্গি কি না, তা বুঝতে পারেননি। হুট করেই কাজের কথা বলে ১৫ দিন আগে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন ছেলে। এরপর তাঁরা কোনো যোগাযোগ করেননি। জঙ্গি আস্তানা থেকে ছেলের স্ত্রী গ্রেপ্তার হওয়ার পর হঠাৎ বিষয়টি জানতে পারেন। তিনি বলেন, ‘ছাওয়াল অন্যায় করলি শাস্তি পাবি, তাতি আমার কোনো কথা নাই। আমার নাতনি দুইডা তো কোনো অপরাধ করে নাই। আমি আমার নাতনিগেরে আমার কাছে আনবের চাই।’

ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামের এক পাশে মাহাতাবদের বাড়ি। একটি দোচালা, একটি আধা পাকা টিনের ঘর নিয়ে বাড়িটি। বাড়ির চারদিকে আটকানো। ভেতরে সুনসান। কাউকে সেখানে পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন

প্রতিবেশীরা জানান, বাড়িতে মাহাতাব তাঁর বাবা ও মায়ের সঙ্গে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকতেন। তাঁর আরেক ভাইও ভ্যানচালক। তিনি অন্য বাড়িতে থাকেন। মাহাতাব ৬ বছর আগে আতাইকুলার সড়াডাঙ্গী গ্রামে মজনু মল্লিকের মেয়ে শাপলা বেগমকে বিয়ে করেন। শাপলা বাড়িতেই সেলাইয়ের কাজ করতেন। বিয়ের পর মাহাতাবের মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। তিনি ধর্মের কথা বলতে শুরু করেন। মাহাতাবের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী শাপলার মধ্যেও বেশ পরিবর্তন শুরু হয়। তিনি প্রতিবেশীদের সঙ্গে মেলামেশা বাদ দেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই গ্রামে বসবাস করলেও মাঝেমধ্যেই ঢাকায় যাওয়ার কথা বলে বাড়ি ছাড়তেন। কয়েক দিন পর আবার ফিরে আসতেন।

আরও পড়ুন

গ্রামের বাসিন্দা ও লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জালাল প্রামাণিক বলেন, তিন বছর আগে মাহাতাব জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তাঁর গতিবিধিতে বিষয়টি বোঝা যেত। তিনি মাঝেমধ্যেই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নিখোঁজ হতেন। আবার ফিরে আসতেন। আগেও জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে একবার তাঁকে গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। চার দিন পর আবার তিনি ফিরে আসেন। শেষ পর্যন্ত তাঁর পরিবারও বিষয়টি বুঝতে পেরেছিল। ১৫ দিন আগে  স্ত্রী-সন্তান নিয়ে চলে যান।

জানতে চাইলে আতাইকুলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, কয়েক দিন আগে মাহাতাবের বাবা হাবিবুর মণ্ডল ছেলে নিখোঁজের বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে এসেছিলেন। তবে তিনি ছেলের জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি জানতেন। ছেলে আত্মগোপন করেছেন বলে থানায় জানায়। ফলে তাঁর জিডিটি গ্রহণ করা হয়নি। তবে পুলিশ খোঁজখবর নিচ্ছিল। এর মধ্যেই তাঁর স্ত্রী গ্রেপ্তার হন।

আরও পড়ুন