বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হলে ভারতেরই ক্ষতি হবে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক আছে, সেটা যদি নষ্ট হয়, তাহলে বাংলাদেশের নয়, ভারতেরই ক্ষতি হবে বলে মন্তব্য করেছেন নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ শহরের কেন্দ্রীয় লঞ্চ টার্মিনাল–সংলগ্ন বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বিআইডব্লিউটিএর নির্মাণাধীন মাল্টিপারপাস জেটি নির্মাণ প্রকল্প পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি খানপুরে ইনল্যান্ড কনেটইনার টার্মিনাল পরিদর্শন করেন।
উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ভারত একটি বৃহৎ দেশ, আমরা তাদের পাশের ছোট প্রতিবেশী। ভারত বলব না, ভারতের মিডিয়া বেশি করছে, আর কিছু পলিটিশিয়ান আছেন, তাঁদের আগামীর নির্বাচন আছে, সেগুলোর জন্য তারা এগুলো বলছেন। তাঁরা যদি আমাদের পায়ে পড়ে ঝগড়া করতে চায়, তাহলে আমরা তো সব সময় চুপ থাকব না। আমাদের মিডিয়াও চুপ থাকবে না। এটা ভালো লক্ষণ নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো হওয়া উচিত।’
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এখন উনারা (ভারত) একজনকে পছন্দ করে, সে কারণে উনার জন্য এখানে অস্থিতিশীল করতে হবে? বাংলাদেশ অস্থিতিশীল যদি হয়ও, তাহলে উনারা কী আরামে থাকতে পারবে? ১৮ কোটি লোকের দেশ এটা, কাজেই আমি মনে করি না ভারতের সরকার এই ধরনের কোন কাজ করবে।’
সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, ‘ভারতের কিছু মিডিয়া, কিছু পলিটিশিয়ান আছেন, ইলেকশন করবেন—এগুলো করে তাঁরা মনে করেন ভোট পাবেন। এগুলো একান্তই তাঁদের ব্যাপার। আমি মনে করি, ভারতের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক আছে, সেটা যদি নষ্ট হয়, ভারতের ক্ষতি হবে, আমাদের না।’
বাংলাদেশের পোশাকশিল্পকে বন্ধ করে দেওয়ার পেছনে বড় ধরনের ষড়যন্ত্র আছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা সাখাওয়াত বলেন, ‘এখানে শুধু শ্রমিককে দোষ দিলে হবে না। এখানে কী ধরনের ষড়যন্ত্র আছে, আমরা মোটামুটি টের পাচ্ছি। এগুলোর বিষয়ে আমরা কী করতে চাইছি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে একটি নির্দেশনা দেওয়া হবে।’
শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গা দূষণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পরিবেশবাদীরা যা করবেন, তাতে সহযোগিতা করা হবে। শীতলক্ষ্যার পাড়ে যে দূষণ হচ্ছে, এটা আমারও কনসার্ন। মাছ হচ্ছে না, গন্ধ বের হচ্ছে। বুড়িগঙ্গা থেকে মানুষ নাকে কাপড় দিয়ে বের হয়—এটা তো হতে পারে না। পরিবেশের জন্য সাংঘাতিক দুষ্কর ব্যাপার। এখানে বর্জ্যে পানি নষ্ট হচ্ছে, সে পানিতে মাছও হচ্ছে না, গাছও হচ্ছে না। কিছুই হচ্ছে না। সব পানি বিষাক্ত হয়ে গেছে। সম্মিলিতভাবে দূষণমুক্ত কাজ করা হবে। নদীর এমন এমন জায়গায় চারতলা-পাঁচতলা ভবন করা হয়েছে—এটা করতে গেলে আপনারা আবার পেছনে পড়বেন। আমরা আমাদের ন্যায্য কাজটা করতে গেলেও বাধা আসছে। সেই বাধাগুলো পাবলিকের থেকেও আছে, তখন আপনারা তুলে ধরলে আমাদের সমস্যা হয়।
সাংবাদিক হিসেবে আপনারা যেটা জেনুইন, সেটাই করবেন, আমি আপনাদের সঙ্গে থাকব।’
শীতলক্ষ্যাপারের গাছ কাটার প্রতিবাদ ও গাছ রক্ষার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে ‘শীতলক্ষ্যাপাড়ের গাছ রক্ষায় নারায়ণগঞ্জবাসী’ নামের সংগঠনটি। তারা মানববন্ধন, নাটকসহ বিভিন্ন প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন। সংগঠনের নেতাদের দাবি জানালে এ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা সাখাওয়াত বলেন, বিশ্বব্যাংক যখন কোনো জায়গায় কিছু করে, তখন তারা সমীক্ষা ও পরিকল্পনা করেই সবকিছু করে। এখানে উন্নয়নও হবে, সঙ্গে পরিবেশও থাকবে। বিশ্বব্যাংকের পরিকল্পনায় আগে না থাকলেও মাছ ব্যবসায়ীদের জন্য শেড করে দেওয়া হবে।
উপস্থিত ছিলেন বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা, প্রধান প্রকৌশলী (ড্রেজিং) রকিবুল ইসলাম তালুকদার, পরিচালক (বন্দর ও পরিবহন) একে আরিফ উদ্দিন, প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল) মাইদুল ইসলাম, প্রকল্প পরিচালক আইয়ুব আলী প্রমুখ।