আওয়ামী লীগকে কি নির্বাচনে আনা হবে, প্রশ্ন রুমিন ফারহানার
আওয়ামী লীগকে কি নির্বাচনে আনা হবে, প্রশ্ন রেখে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহসম্পাদক রুমিন ফারহানা বলেছেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের একটা বড় অংশ কিন্তু চাইছে না আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। তারা চাইছে, সব বিচার শেষ করে নির্বাচন হবে। অনেক দিক থেকে অনেক প্রশ্ন আছে। সুতরাং আমরা শুধু আজ আর কালের কথা ভাবলে হবে না। আজ থেকে ১০ থেকে ২০ কিংবা ৫০ বছর পর কী হবে, সেই কথাও ভাবতে হবে।’
আজ মঙ্গলবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে রুমিন ফারহানা এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘বলা হবে, ২০১৪-১৮ সালের নির্বাচনে যা হয়েছে, ২০২৪-২৫ সালের নির্বাচনেও তা-ই হয়েছে। সুতরাং এই সব কিছুর চিন্তা মাথায় রেখেই আমাদের নির্বাচনের পথটা পাড়ি দিতে হবে।’
রুমিন ফারহানা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনের মাঠে আসে, তাহলে নির্বাচনের মাঠের পরিবেশ কী হবে? একটা কি মারামারি, রক্তপাতের দিকে বাংলাদেশ যাবে? আমি মনে করি, এই প্রশ্নগুলো সবার মনে আছে, কেউ মুখে বলছে না। সুতরাং দয়া করে প্রশ্নগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা হওয়া উচিত। এই প্রশ্নগুলোর সুরাহা বা সমাধান এই আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়েই হওয়া উচিত।’
বিএনপির সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘গত ৫ আগস্টের পর নানা মহল বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত। তারা এক দিনের জন্য এই সরকারকে শান্তিতে দেশ পরিচালনা করতে সুযোগ দিতে রাজি নয়। আমরা বিশ্বাস করি, দেশের মানুষও বিশ্বাস করে, একটি নির্বাচিত সরকার যত সহজে এ ধরনের অস্থিতিশীলতা বা সমস্যা মোকাবিলা করতে পারে, আর কোনো সরকারের পক্ষে সমস্যা মোকাবিলা করা এত সহজ নয়। সুতরাং, দেশের স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে একটি নির্বাচন যত দ্রুত সম্ভব দিলে, সেটা সবার জন্যই মঙ্গলজনক।’
রুমিন ফারহানা বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের মাধ্যমে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা পেয়েছি নির্বাচন কবে হচ্ছে। এটি একটি ভালো খবর। তবে আমরা আরও বেশি আনন্দিত হতাম এবং আশ্বস্ত হতাম, রোডম্যাপটি কী হতে পারে, তাঁরা কবে নির্বাচন নিয়ে ভাবছেন, সেটা যদি তাঁরা একটু পরিষ্কার করতেন।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে এখন অনেক প্রশ্ন। প্রথমত, আগামী নির্বাচন কবে হচ্ছে? দ্বিতীয়ত, সেই নির্বাচনে কি সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করতে পারবে? আমাদের আসলে সত্যটাকে সত্য বলেই সামনে এগোতে হবে।’
বিএনপির এই নেত্রী আরও বলেন, ‘আমরা দেখেছি একটা অর্থনৈতিক স্থবিরতা। আমরা লক্ষ করছি, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ কিন্তু সেভাবে হচ্ছে না। কারণ, বিনিয়োগের জন্য একটা স্থিতিশীল পরিবেশ প্রয়োজন। ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করবেন তখনই, যখন দেশে স্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করে। তাই সেই দিক থেকে চিন্তা করলে নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নেই। সুতরাং আমরা আশা করব, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাদের একটি রোডম্যাপ দেবে, কী কী সংস্কার তারা কত দিনের মধ্যে সম্পন্ন করে মানুষের ক্ষমতা মানুষের হাতে ফিরিয়ে দেবে, এটা আমাদের প্রত্যাশা।’
মামলা বাণিজ্যের বিষয়ে রুমিন ফারহানা বলেন, ‘আমরা জানি, বহু নিরীহ মানুষকে টাকা দিলে মামলা থেকে নাম বাদ যাবে, টাকা না দিলে মামলায় নাম দেওয়া হবে, এ রকম ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনা শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নয়, সারা বাংলাদেশে ঘটেছে, যা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। আপনাদের মাধ্যমে পুলিশকে অনুরোধ করব, মামলা নেওয়ার আগে দয়া করে যাচাই-বাছাই করবেন।...আর যারা মামলা–বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত তাদের আমি বলব, সাবধান হয়ে যান।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু জীবন দিতে শিখেছে। বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু ক্ষমতার বিরুদ্ধে শক্তভাবে দাঁড়াতে শিখেছে। এই শেখা জিনিস কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ কখনো ভুলবে না। সাঁতার যে একবার শেখে, সে কিন্তু আমৃত্যু সাঁতার কাটতে পারে। সুতরাং সাবধান হয়ে যান।’