গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি-সাঘাটা) আসনের উপনির্বাচনের অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের দ্বিতীয় দিন ছিল আজ বুধবার। এদিন সকাল নয়টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সম্মেলনকক্ষে প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ নির্বাচনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কথা শোনে তদন্ত কমিটি।
আজ তদন্ত কমিটিকে বক্তব্য দেওয়ার পর অন্তত ২৬ জন প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তবে তাঁদের কেউই নাম প্রকাশ করতে চাননি।
তাঁদের বেশির ভাগ কর্মকর্তা বলেন, ‘তদন্ত কমিটি আমাদের কাছে ভোটের দিনের প্রকৃত চিত্র জানতে চায়। কমিটিকে জানিয়েছি, আমরা যেসব কেন্দ্রের দায়িত্বে ছিলাম, সেসব কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু ভোট হয়েছে।’ তবে দুজন কর্মকর্তার ভাষ্য, তাঁরা বলেছেন, তাঁদের কেন্দ্রে কোনো কোনো এজেন্ট প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেন। তাঁদের তাঁরা সরিয়ে দিয়েছেন।
তিন দিনব্যাপী এ তদন্তকাজ চলবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। এতে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট অন্তত ৬৮৫ জনের বক্তব্য নেওয়া হবে। গতকাল মঙ্গলবার তদন্তের প্রথম দিন গাইবান্ধা সার্কিট হাউস মিলনায়তনে অন্তত ১৪৬ জনের বক্তব্য নেওয়া হয়।
এ উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী পাঁচ প্রার্থীর বাড়ি সাঘাটা উপজেলায়। তাই আজকের তদন্ত ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে উপজেলা পরিষদ চত্বরে নেতা–কর্মী ও সমর্থকদের বেশ ভিড় ছিল।
আজ দ্বিতীয় দিনে ৪০ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ২৭৮ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ২০০ জন পোলিং এজেন্ট, সাঘাটা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নওগাঁ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং সাঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বক্তব্য শোনার কথা তদন্ত কমিটির। তবে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত কতজনের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে, তা জানাতে পারেনি তদন্ত কমিটি।
বিকেলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও গাইবান্ধা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আবদুল মোত্তালিব প্রথম আলোকে বলেন, দিনভর শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনেকের বক্তব্য শোনা হয়। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
আজ বিকেল চারটায় স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ আমরা ৪০টি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার বক্তব্য নিয়েছি। এখনো আমাদের কার্যক্রম শেষ হয়নি। আরও পোলিং এজেন্ট ও স্থানীয় সাংবাদিকদের বক্তব্য নেব। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) গাইবান্ধা সার্কিট হাউস মিলনায়তনে শেষ দিনের তদন্ত কার্যক্রম চলবে। সেখানে স্থগিত ঘোষিত কেন্দ্রগুলোর আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের আমরা ডেকেছি। তাঁদেরও বক্তব্য নেব।’
তদন্ত কমিটি কয়েকটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে সিসিটিভি ফুটেজ দেখিয়ে বহিরাগতদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের বিষয়ে প্রশ্ন করে বলে জানিয়েছেন একাধিক কর্মকর্তা। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কী বলেছেন জানতে চাইলে অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা যাবে না। আমরা সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনের কাছে জমা দেব।’
১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনে উপনির্বাচন ছিল। এদিন সকালে ভোট গ্রহণ শুরুর পর থেকেই অনিয়মের কারণে একের পর এক কেন্দ্রের ভোট বাতিল করতে থাকে ইসি। দুপুর নাগাদ এক-তৃতীয়াংশ কেন্দ্রের ভোট বাতিল করা হয়। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে বেলা আড়াইটার দিকে পুরো ভোট গ্রহণই বন্ধ ঘোষণা করে ইসি।
এরপর ১৩ অক্টোবর অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। কমিটির আহ্বায়ক বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। কমিটির বাকি দুই সদস্য হলেন যুগ্ম সচিব কামাল উদ্দিন বিশ্বাস ও শাহেদুন্নবী চৌধুরী।
এ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া গত ২৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এরপর আসনটি শূন্য ঘোষণা করে ইসি।