ভোলায় ভিজিডির চাল কম দেওয়ার অভিযোগ ইউপি সচিবের বিরুদ্ধে, জড়িত বিএনপি নেতাও
ভিজিডির চাল কম দেওয়ার অভিযোগ ইউপি সচিবের বিরুদ্ধে, জড়িত বিএনপি নেতাও
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার জিন্নাগড় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সচিবের বিরুদ্ধে অতিদরিদ্রদের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির (ভিজিডি) চাল কম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় চাল বিতরণ বন্ধ করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
ইউনিয়ন বিএনপির নেতা–কর্মীদের উপস্থিতি এ অনিয়ম হয়েছে বলে জানা গেছে। নিজেদের দুস্থ কর্মীদের জন্য অর্ধেক রেখে কার্ডধারী ব্যক্তিদের অর্ধেক দেওয়ার কথা জানিয়েছেন ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক।
এ বিষয়ে ইউপি সচিব মো. বশিরুল্লাহ বলেন, ‘আমি জুলাই-আগস্ট দুই মাসের স্বাক্ষর নিয়ে চাল বুঝিয়ে দিয়েছি। যদি তাঁদের কাছ থেকে কেউ চাল রেখে দেন, তাহলে আমার কী করার।’ কে বা করা রেখে দিয়েছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি জানি না।’
একাধিক দুস্থ নারী ও তাঁদের স্বজনেরা জানান, জিন্নাগড় ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান ভূঁইয়ার উপস্থিতিতে ইউপি সচিব দুস্থ ব্যক্তিদের এক বস্তা করে চাল বিতরণ করেছেন। প্রতিবাদ করলে বিএনপির কর্মীরা তাঁদের মারধর করে বের করে দিয়েছেন।
জিন্নাগড় ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান ভূঁইয়া বলেন, ২৬ অক্টোবর ভিজিডির চাল বিতরণের সময় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের গরিব-দুস্থ কর্মীরা ইউনিয়ন পরিষদে ঢুকে হইচই করে চাল বিতরণ বন্ধ করে দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, বিগত ১৫ বছর বিএনপির সমর্থকদের কোনো ত্রাণ দেওয়া হয়নি। এ কারণে ৫ নভেম্বর তিনি গরিব-দুস্থ বিএনপির কর্মীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভিজিডি কার্ডপ্রাপ্তদের বুঝিয়ে এক বস্তা করে চাল বিতরণ করেছেন। আরেক বস্তা বিএনপির দুস্থদের মধ্যে বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়ে চলে আসেন। বিগত দিনে যাঁদের দুস্থ বানিয়ে ভিজিডির কার্ড বিতরণ করেছে, তাঁদের অনেকেই স্বাবলম্বী। পুনরায় হইচই-হট্টগোল শুরু হলে আবার সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি ঠান্ডা করেন।
চরফ্যাশন উপজেলা প্রশাসন, জিন্নাগড় ইউপি, ভিজিডির কার্ডপ্রাপ্ত দুস্থ নারী, ইউপি সচিবের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জিন্নাগড় ইউনিয়নে ভিজিডির কার্ডপ্রাপ্ত সুবিধাভোগীর সংখ্যা ২৮২। ২৬ অক্টোবর ইউপি সচিব মো. বশিরুল্লাহ জুলাই-আগস্ট দুই মাসের দুস্থ ব্যক্তিদের জন্য চরফ্যাশন মুখরবান্দা খাদ্যগুদাম থেকে ৫৬৪ বস্তা চাল উত্তোলন করেন। ২৭ অক্টোবর তিনি তদারক কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দিক ও ইউপি সদস্যদের অনুপস্থিতিতে শতাধিক দুস্থ ব্যক্তির মধ্যে চাল বিতরণ করেন। তখন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের কর্মীদের বাধায় চাল বিতরণ বন্ধ হয়ে যায়। পুনরায় গত মঙ্গলবার বিএনপির নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে চাল বিতরণ শুরু করলে দুস্থ ব্যক্তিরা অভিযোগ করেন, ইউপি সচিব তাঁদের থেকে দুই মাসের স্বাক্ষর নিয়ে এক মাসের চাল বিতরণ করছেন। প্রতিবাদ করলে উপস্থিত ইউপি সচিবের সামনে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের লোকজন দুস্থ ব্যক্তিদের চড়থাপ্পড় মেরে বের করে দেন। এ খবর তাঁরা প্রশাসনকে জানালে চাল বিতরণ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ভোলা জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন বলেন, বিগত দিনে যেসব দুস্থ নারীকে ভিজিডির কার্ড দেওয়া হয়েছে, তাঁদের সবাই স্বাবলম্বী নন। স্থানীয় ব্যক্তিদের অনিয়মের কারণে দু-একজন থাকতে পারেন, কিন্তু বাকিরা চাল পাওয়ার অধিকার রাখেন। তাঁদের কেন বঞ্চিত করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নওরীন হক বলেন, বশিরউল্লাহ কয়েক দিন আগে (চাল উত্তোলনের পরে) জিন্নাগড় ইউপি থেকে লালমোহনের পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নে বদলি হয়েছেন। তিনি কাউকে না জানিয়ে অনিয়ম করে ভিজিডির চাল বিতরণ শুরু করেছিলেন। বিষয়টি জানতে পেরে চাল বিতরণ বন্ধ রাখা হয়েছে।