‘মিলি হাজার স্মৃতির মেলায়’ স্লোগানে বিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার মুন্সী হযরত আলী উচ্চবিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন শিল্পী রফিকুন নবী। শনিবার সকালেছবি: সংগৃহীত

বিপ্লবী ইলা মিত্রের স্মৃতিবিজড়িত চাঁপাইনবাবগঞ্জে বরেন্দ্রভূমির নাচোলে শনিবার উৎসবের আনন্দে মেতেছিল তিন প্রজন্মের হাজারো মানুষ। উপলক্ষ ছিল প্রিয় বিদ্যালয়—নাচোলের মুন্সি হযরত আলী উচ্চবিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব। উৎসবে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেন ‘রনবী’ হিসেবে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক একুশে পদকপ্রাপ্ত চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী।

নবীন-প্রবীণের এ মিলনমেলায় হাজারো স্মৃতির ঝাঁপি খুলে ধরেছিল বহু পুরোনো দিনের বন্ধুদের কাছে। শৈশবের সেই সোনালি দিনগুলোতে ফিরে গিয়েছিলেন তাঁরা। অনুষ্ঠানের স্লোগানও ছিল ‘মিলি হাজার স্মৃতির মেলায়’। শনিবার সকালে বিদ্যালয় মাঠে পতাকা উত্তোলন, পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন রফিকুন নবী। পরে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

অধ্যাপক রফিকুন নবী নিজের শৈশব জীবনের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে শিবগঞ্জের ছত্রাজিতপুর ইউপির ঢোরবোনা গ্রামে নানাবাড়িতে জন্ম, সদর উপজেলার গোবরতালায় নিজেদের বাড়ি, আমনুরা জংশন স্টেশনে নেমে গরুর গাড়িতে বাড়ি যাওয়া, রুক্ষ-শুষ্ক বরেন্দ্রভূমির ইলা মিত্রে তেভাগা আন্দোলনখ্যাত সেই সময়ের নাচোল, আজকের সবুজে ভরে যাওয়া নাচোলের কথা বলেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে নানা পরামর্শ দিলেন। সম্প্রতি শিক্ষকদের সঙ্গে ঘটনা নিয়ে দুঃখ প্রকাশও করলেন।

প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে এত মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আমাকে অভিভূত করেছে। আমি আনন্দিত হয়েছি, উপভোগ করেছি।’

সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক মো. মাহাতাব উদ্দীন (মরণোত্তর), সাবেক প্রধান শিক্ষক মো. ইয়াসিন আলী ও সাবেক সহকারী শিক্ষক মইনুল ইসলামকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত মো. লুৎফল হক, মোস্তাক হোসেন মিয়া, তসলিম উদ্দীন ও জমিদাতা মুন্সী হযরত আলীকে মরণোত্তর আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষক এবং কর্মচারীদেরও সম্মাননা দেয় সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন কমিটি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন কমিটির সভাপতি, বিদ্যালয়ের ছাত্র ও দৈনিক খবরের কাগজের সিটি এডিটর আবদুল্লাহ আল মামুন। বক্তৃতা করেন নাচোলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) সবুজ হাসান, নাচোল সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমান, নাচোল মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ওবাইদুর রহমান, সাবেক সহকারী শিক্ষক মইনুল ইসলাম, নাচোল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত প্রভাষক নুরুল ইসলাম, নাচোল কলেজের প্রভাষক মো. শফিকুল আলম, সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন পরিষদের সদস্যসচিব ও মুন্সী হযরত আলী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সাদিকুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু তাহের খোকন এবং টিভি উপস্থাপক ও সংবাদ পাঠক রুপা নূর। রাতে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠের বিজয়ী শিল্পী রাকিবা ইসলাম ঐশী ও শিল্পী দেবাশীষ দেব। গম্ভীরা পরিবেশন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জনপ্রিয় গম্ভীরা দল ‘চাঁপাই গম্ভীরা’।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে নাচোল রেলস্টেশন এলাকায় কয়েকজন তরুণ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। প্রয়াত প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক মো. মাহাতাব উদ্দীন, সাবেক প্রধান শিক্ষক মো. ইয়াসিন আলী ও সাবেক সহকারী শিক্ষক মো. মইনুল ইসলামের নেতৃত্বে এলাকার শিক্ষানুরাগীরা এ উদ্যোগে এগিয়ে আসেন। জমিদাতা মুন্সী হযরত আলীর নামে বিদ্যালয়ের নামকরণ হয়। গত বছর ৫০ বছর পূর্ণ হয়েছে মুন্সী হযরত আলী উচ্চবিদ্যালয়ের। তখন চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়া হলেও বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন ও একতরফা জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সৃষ্ট উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে উৎসব পিছিয়ে দেওয়া হয়।