সিলেটের গোলাপগঞ্জে ছাত্র-আন্দোলন চলাকালে গুলিতে নিহত সানি আহমদ। সানিকে হত্যার অভিযোগে তাঁর বাবা কয়ছর আহমদ গত ২৫ আগস্ট থানায় মামলা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ওই সময় পুলিশ মামলাটি নেয়নি। পরে বিএনপির কয়েকজন নেতা তাঁর বাড়িতে গিয়ে তাঁর সই নেন।
এরপর তাঁকে বাদী দেখিয়েই পুলিশ মামলা নেয়। কিন্তু যাঁদের আসামি করে মামলা করেছেন, তাঁদের মধ্যে এসি ল্যান্ড ও গোপালগঞ্জ থানার তৎকালীন ওসিসহ কয়েকজনের নাম বাদ দিয়ে মামলাটি নেওয়া হয়। বিষয়টি জানতে পেরে কয়ছর আহমদ আবার আগের আসামিদের বিরুদ্ধেই আদালতে মামলা করেন। কিন্তু সেই মামলা প্রত্যাহারের জন্য পুলিশ ও বিএনপির নেতা–কর্মীরা চাপ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
আজ রোববার বিকেলে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন নিহত সানি আহমদের বাবা গোলাপগঞ্জের রায়গড় গ্রামের কয়ছর আহমদ।
সংবাদ সম্মেলনে কয়ছর আহমদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সানি আহমদের মামা মো. আলী আব্বাস।
লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, গত ৪ আগস্ট সিলেটের গোলাপগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে পুলিশ, বিজিবি এবং আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীদের হামলা-গুলিতে ৭ জন নিহত হন। তাঁদের মধ্যে সানি আহমদও ছিল। ঘটনার সময় গোলাপগঞ্জ থানার তৎকালীন ওসি মাছুদুল আমিন ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)/এসি ল্যান্ড অভিজিৎ চৌধুরীর নির্দেশে নির্বিচার গুলি চালায় পুলিশ, বিজিবি সদস্য এবং আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা। এই ঘটনায় ২৫ আগস্ট সানি আহমদের বাবা কয়ছর আহমদ ওসি মাছুদুল আমিন ও এসি ল্যান্ড অভিজিৎ চৌধুরী এবং সংঘর্ষকালে ঘটনাস্থলে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাদের নাম উল্লেখ করে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু ওই দিন সেটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করেননি গোলাপগঞ্জ থানার বর্তমান ওসি মীর মোহাম্মদ আব্দুন নাসের।
এর দুই দিন পর ২৭ আগস্ট স্থানীয় বিএনপির কয়েকজন নেতা সানির বাড়িতে যান এবং ওসির কথা বলে ‘মামলা রেকর্ড করতে কাগজে স্বাক্ষর লাগবে’ জানিয়ে কয়েকটি সাদা কাগজে কয়ছরের স্বাক্ষর নিয়ে যান। পরে থানায় গিয়ে কয়ছর আহমদ ওসির সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও তিনি দেখা করেননি। এ অবস্থায় কয়ছর আহমদ ২ সেপ্টেম্বর সিলেটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২ নম্বর আমলি আদালতে হত্যা মামলা করেন। মামলাটি আদালত আমলে নিয়ে থানা–পুলিশকে এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সানি আহমদের মামা আলী আব্বাস আরও বলেন, আদালতে মামলার পর কয়ছর আহমদ জানতে পারেন থানায় দেওয়া তাঁর অভিযোগ ওসি আমলে না নিয়ে মনগড়া একটি এজাহার লিখেছেন এবং তৎকালীন ওসি মাছুদুল আমিন ও এসি ল্যান্ডকে বাদ দিয়ে ২৭ আগস্ট মামলা রেকর্ড করেছেন।
কয়ছর আহমদ বলেন, আদালতে মামলার পর পুলিশ এবং বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা সে মামলা তুলে নিতে তাঁকে বারবার চাপ দিচ্ছেন। মামলা প্রত্যাহার না করলে কয়ছর ও তাঁর পরিবারকে নানাভাবে হয়রানি করা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
নিহত সানি আহমদের মামা আলী আব্বাস প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির সমর্থক পরিচয়ে গোলাপগঞ্জের জামাল ও কবির তাঁর বোন জামাইয়ের কাছ থেকে সাদা কাগজে সই নিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিলেন। তিনি তাঁদের চেনেন না।
হত্যা মামলার বাদীকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বিএনপির নেতা ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের চাপ দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হলে বিএনপির কারও আপত্তি থাকার কথা না। গোলাপগঞ্জে হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তির পরিবারকে মামলা প্রত্যাহারের ব্যাপারে কেউ হুমকি দিচ্ছে বলে তিনি শোনেননি। গোলাপগঞ্জে জামাল ও কবির নামের কেউ বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন বলে তাঁর জানা নেই।
গুরুত্বপূর্ণ আসামিদের নাম বাদ দিয়ে মামলা রেকর্ড করা এবং একই ঘটনায় আদালতে হওয়া মামলা প্রত্যাহারের জন্য বাদীকে চাপ ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে গোলাপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোহাম্মদ আব্দুন নাসের প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়ছর আহমদ যে অভিযোগগুলো করছেন সেগুলো তাঁকে কেউ ইন্ধন দিয়ে করিয়ে থাকতে পারেন। এর মধ্যে তিনি আদালতে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। ওই অভিযোগটি আদালত এফআইআর হিসেবে নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন বলে শুনেছি। তবে সেটি থানায় পৌঁছায়নি। যেহেতু আদালত তাঁর অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন, তাহলে আবার কেন তিনি সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করছেন। এতে বোঝা যায় তিনি কোনো অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কারও পক্ষ হয়ে এমনটি করছেন।
ওসি আব্দুন নাসের দাবি করে বলেন, তিনি (কয়ছর আহমদ) থানায় যে অভিযোগটি করেছেন, সেটি থানায় গিয়ে নিজে স্বাক্ষর করেছেন। অভিযোগের প্রতিটি পাতায় তিনি নিজে স্বাক্ষর করেছেন। সাদা কাগজে অভিযোগের স্বাক্ষর নেওয়া হলে সেটি মেলার কথা না।