কাউন্সিলর পদে আ.লীগ বনাম আ.লীগ 

গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ৩০০ জন এবং সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ৮১ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে নগরের বিভিন্ন এলাকায় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের পক্ষে ব্যানার-ফেস্টুন লাগিয়েছেন নেতা-কর্মীরা। সম্প্রতি নগরের চৌহাট্টা এলাকায়
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

সিলেট সিটি করপোরেশনের ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে ২০ জন সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থী তৎপর আছেন। এর মধ্যে অন্তত আটজন আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। নগরের ৪২টি ওয়ার্ডেই দলটির একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। তাঁদের সমর্থনে ওয়ার্ডের কর্মীরাও এখন বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে তৃণমূলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল বেড়েছে। 

আওয়ামী লীগের মহানগর ও ওয়ার্ড পর্যায়ের একাধিক নেতা-কর্মী এবং সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। 

নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মেয়র পদে পাঁচজন, সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ৩০০ জন এবং সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ৮১ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তফসিল ঘোষণার পর প্রতিটি ওয়ার্ডেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা বেড়েছে। সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনে কাউন্সিলর পদে অন্তত ৫০০ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুক। এর মধ্যে অন্তত ২৫০ প্রার্থী ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতা, কর্মী ও সমর্থক। আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর আগেই এসব সম্ভাব্য প্রার্থী প্রতিদিনই মতবিনিময় করছেন ও ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও তাঁরা সরব আছেন। 

গত এক সপ্তাহ নগরের ৪২টি ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, পাড়া-মহল্লায় সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থনে ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড সাঁটানো হয়েছে। প্রতিদিনই প্রার্থীরা এলাকাবাসীর সঙ্গে নির্বাচনী মতবিনিময় সভা ও কুশল বিনিময় করছেন। সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ভোটারদের কাছে দোয়া ও আশীর্বাদ চাইছেন। নির্বাচিত হলে কে কী করবেন, এ প্রতিশ্রুতিও অনেক প্রার্থী দিচ্ছেন। 

৩২ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান সদ্য সাবেক খাদিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফছর আহমদ। জেলা আওয়ামী লীগের এই সদস্য বলেন, তাঁর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগপন্থী হিসেবে পরিচিত দুজন নির্বাচন করবেন। প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা সমাজে কতটুকু আছে, সেটা বিবেচনায় নিয়েই ভোটাররা দলমত-নির্বিশেষে ভোট দেবেন। তাই নির্বাচনে দলের একাধিক প্রার্থী থাকলেও কোনো সমস্যা হবে না। 

দলটির তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীরা বলছেন, কাউন্সিলর পদে প্রতীক ছাড়া নির্বাচন হচ্ছে, তাই এ পদে একক প্রার্থিতার বিষয়ে দলের কোনো নির্দেশনা নেই। তবে নির্বাচনী মাঠে একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী থাকায় এরই মধ্যে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়েছে। আড়ালে একে অন্যের দোষত্রুটি সামনে আনার চেষ্টা করছেন। আগামী ২ জুন প্রতীক বরাদ্দের পর আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হলে সংকট আরও বাড়ার আশঙ্কা আছে। 

৮ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১০ জন সম্ভাব্য প্রার্থী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এর মধ্যে পাঁচজনই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা, কর্মী, সমর্থক। তাঁরা হচ্ছেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জগদীস চন্দ্র দাশ, শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমান কাউন্সিলর ইলিয়াছুর রহমান, সদস্য সুদীপ দে ও সাব্বির খান, ৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বিদ্যুৎ দাস এবং মহানগর যুবলীগ নেতা রানা আহমেদ। 

৮ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ইলিয়াছুর রহমান, ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী থাকলেও কোনো সমস্যা হবে না। কারণ, এটা স্থানীয় নির্বাচন। এখানে দল বিবেচনায় নিয়ে ভোটাররা খুব কমই ভোট দেবেন। ‘ব্যক্তি ইমেজ’ ও স্থানীয় কিছু বিষয় এখানে মুখ্য। 

মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওয়ার্ডগুলোতে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা-কর্মী কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়ায় প্রতিটি পাড়া-মহল্লার দলীয় সমর্থকেরাও বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। আওয়ামী লীগে একাধিক প্রার্থী থাকায় অন্য প্রার্থীরা ভোটের মাঠে তুলনামূলকভাবে এগিয়ে থাকবেন। এ ছাড়া কাউন্সিলর পদে একাধিক প্রার্থী থাকায় আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীকে কিছুটা হলেও কর্মী–সংকটে পড়তে হবে। 

এ বিষয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন বলেন, কাউন্সিলর পদে প্রার্থিতার বিষয়ে কেন্দ্র থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে একাধিক প্রার্থী থাকার বিষয়টি কেন্দ্রকে জানানো করা হবে।