বেনজীরের রিসোর্টের সামনে পুলিশের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের লাঠিপেটার অভিযোগ
গোপালগঞ্জ সদর এলাকায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের মালিকানাধীন সাভানা ইকোরিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কের সামনে স্থানীয়দের ওপর পুলিশের হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার সন্ধ্যার পরপর এ ঘটনায় চারজন যুবক আহত হয়েছেন বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাঁরা জানান, গণমাধ্যমে বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে সম্পত্তির দখলের বিষয়ে কথা বলায় পুলিশ তাঁদের লাঠিপেটা করে।
এদিকে পুলিশ বলছে, সাভানা ইকোরিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কের সামনে দোকানে স্থানীয় কিছু লোক ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। ওই এলাকায় জুয়া খেলছে এবং হইচই করছে। এতে ওই পার্কের দায়িত্বে থাকা কর্মচারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এমন খবর পেয়ে সন্ধ্যার পর গোপালগঞ্জের বৌলতলী ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা সেখানে যান। জুয়ার আড্ডায় থাকা মানুষজনকে সরাতে দৌড়ানি দেওয়া হয়। এ সময় একজন পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছে।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিচুর রহমান বলেন, ওই এলাকায় পুলিশ লাঠিপেটা করেছে, এমন কোনো ঘটনা তাঁকে কেউ জানাননি।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের বরাতে জানা যায়, পুলিশের লাঠির আঘাতে চারজন আহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন ইকোপার্ক–সংলগ্ন সাহাপুর ইউনিয়নের বৈরাগীটোল গ্রামের বিনোদ বিহারি বলের ছেলে বিপ্লব বল, সন্তোষ বলের ছেলে সঞ্জয় বল ও সাগর বল এবং ওই এলাকার রনি নামের এক যুবক।
সঞ্জয় বল প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত দুই বছরে বেনজীর আহমেদ আমাদের গ্রামের অসহায় লোকের জমি দখল করে নিয়েছে। এ নিয়ে আমরা ভয়ে মুখ খুলতে পারিনি। দুদক অনুসন্ধানে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের বিপুল সম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসার পর দুই–তিন দিন ধরে আমরা গণমাধ্যমে কথা বলি। এ কারণে আজ সন্ধ্যার পর পুলিশ এসে আমাদের লাঠিপেটা শুরু করে। আমার মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলেছে। আমাদের কী দোষ ছিল পুলিশ এসে আমাদের বেধড়ক মারপিট করবে?’
গোপালগঞ্জের বৌলতলী ফাঁড়ি পুলিশ জানায়, সন্ধ্যার পরে সাভানা ইকোরিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কের কর্মচারীরা মুঠোফোনে জানান পার্কের সামনে স্থানীয় লোকজন জড়ো হয়েছে। দারোয়ানকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। খবর পেয়ে সেখানে কয়েকজন পুলিশ সদস্য পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে বৌলতলী পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. আমিনুল ইসলামের মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইদানীং লেখালেখি হচ্ছে এটা (সাভানা ইকোরিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্ক) রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি। যেহেতু পুলিশে চাকরি করি, তাই রাষ্ট্রের সম্পত্তির কিছু হলে আমাদের ওপর চাপ আসবে, আমাদের চাকরি থাকবে না। তা ছাড়া ছোটখাটো বিষয় নিয়ে অনেকের পুরোনো রাগ জমা আছে। তারা নাকি গেটম্যানকে বলছিল, “তোকে কোপায় ফেলব, দেখে নিব।”’
পরিস্থিতির সুযোগে এলাকার কিছু সুযোগসন্ধানী লোক ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে পারে বলে ভাষ্য পুলিশের। পুলিশ পরিদর্শক আমিনুল বলেন, ‘দোকানের ভেতর কিছু লোককে জুয়া খেলতে দেখে তাদের দৌড়ানি দিয়েছি। এ সময় একজন পড়ে যায়। তাই তাদের মাইন্ডে লাগছে। পরে তারা আমাদের বলল, “স্যার, আমাদের মারলেন কেন?” আমি তাদের বুঝিয়ে বললাম আমি তো তোমাদের মারি নাই। তারা বলল, “আপনি দৌড়ানি দিছেন?”এই আরকি, তেমন কিছু না। তাদের লাঠিচার্জ করা হয়নি।’