স্ত্রী ও দুই সন্তানকে ভিডিও কলে রেখে সৌদিপ্রবাসীর আত্মহত্যার ২২ দিন পর এল লাশ
স্ত্রী ও যমজ দুই ছেলেসন্তানকে ভিডিও কলে রেখে সৌদি আরবে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার ২২ দিন পর খোকন হাওলাদারের লাশ দেশে এসেছে। গতকাল বুধবার বিকেল চারটায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে তাঁর লাশ ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনা হয়।
সেখান থেকে একটি লাশবাহী গাড়িতে খোকনের লাশ গতকাল দিবাগত রাত দুইটার দিকে তাঁর গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার দেউলী সুবিদখালী ইউনিয়নের পশ্চিম সুবিদখালীতে নেওয়া হয়। লাশ দেখে খোকনের মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তানসহ স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এলাকাবাসী শেষবারের মতো দেখতে তাঁর বাড়িতে ভিড় করেন। পরে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়েছে।
খোকন হাওলাদারের স্ত্রী নূপুর বেগম বলেন, ‘ভিডিও কলে কথা বলার সময় আমিও পাশে ছিলাম। আমার সঙ্গে তাঁর কোনো ঝামেলা ছিল না। ওই দিন সকালেও তাঁর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। এত দিন স্বামীর লাশ দেখার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম।’
গত ২৪ সেপ্টেম্বর সৌদিপ্রবাসী খোকন হাওলাদার মুঠোফোনে ভিডিও কলে যমজ দুই ছেলে আবদুল করিম শান্ত ও আবদুর রহিম শাওনের সঙ্গে কথা বলছিলেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুই সন্তান ও স্ত্রীকে ভিডিও কলে রেখেই গলায় গামছাসদৃশ কাপড় পেঁচিয়ে বৈদ্যুতিক পাখার সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেন খোকন।
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খোকন হাওলাদার দীর্ঘ সাত-আট বছর ধরে সৌদি আরবে বসবাস করছিলেন। তাঁর যমজ দুই ছেলে আবদুল করিম শান্ত ও আবদুর রহিম শাওন গত বছর এসএসসি পরীক্ষায় সুবিদখালী সরকারি রহমান ইসহাক পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। তারা দুজনই বরিশাল ব্রজমোহন কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য মা নূপুর বেগম বরিশালের আমতলার মোড় এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। খোকন হাওলাদার কিছুদিন আগে ছুটিতে বাড়িতে এসেছিলেন। ১৪ অক্টোবর তিনি আবার সৌদি আরবে কর্মস্থলে ফিরে গিয়েছিলেন।
নিহত খোকন হাওলাদারের ছেলে আবদুর রহিম বলেন, ‘বাবার সঙ্গে প্রতিদিনই মোবাইলে কথা হয়। ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে আমরা দুই ভাই পাশাপাশি ছিলাম। বাবা আমাদের বিভিন্ন উপদেশমূলক কথা বলে। আমরা বড় হয়ে কী হতে চাই, তা–ও জানতে চেয়েছে। সবশেষে আমাদের দুই ভাইকে মোবাইল ফোনে চুমু দিয়ে বলল, তোমাদের ভাসিয়ে দিয়ে গেলাম। এরপর বাবা ঘরের ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করল। আমরা কিছুই করতে পারলাম না।’
দেউলী সুবিদখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আতিকুর রহমান বলেন, গতকাল রাত দুইটার দিকে খোকনের লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। আজ সকালে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়েছে।