পঞ্চগড়-১ (সদর, তেঁতুলিয়া ও আটোয়ারী) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নাঈমুজ্জামান ভূইয়ার নির্বাচনী সভা থেকে তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদুর রহমানকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন নৌকার এক কর্মী।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়নের সর্দারপাড়া এলাকায় সভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় তোফাজ্জল হোসেন তোফা নামের নৌকার ওই কর্মী এ হুমকি দেন।
তোফাজ্জল হোসেন কৃষক লীগ করেন বলে জানা গেছে। হুমকি দিয়ে তাঁর বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাটের (ট্রাক প্রতীক) কর্মী।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে লুঙ্গি পরিহিত তোফাজ্জল হোসেন বক্তব্য দেওয়ার সময় কাজী মাহমুদুর রহমানের নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘এই মোনাফেক সাদা বাহিনীর ভোট নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান হয়ে ঘুরতেছো, তুমি আবার বড় বড় কথা বলো। সর্দারপাড়ার লোক চোর–ডাকাত? নৌকা মার্কার ভোট নিয়ে আসছিলা। নৌকার বিরুদ্ধে এখন ট্রাকের ড্রাইভার? এখন মনে করতেছো সম্রাটের (স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ার সাদাত সম্রাট) কিছু টাকাপয়সা আছে। একটা শেষ কামড় দিয়ে ঘরে ঢুকি। ঘরে ঢুকলেও লাভ নাই। এই নাইমুজ্জামান মুক্তা সর্ব প্রথম তোমার দুদক লাগায় রাখবে। তোমার হিসাব দিতে হবে। আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি নাইবুল চেয়ারম্যানকে আমরা মাইর দিয়ে ঘরে ঢুকাইছি, নজরুল ওয়ার্কশপকে (শ্রমিক লীগ নেতা নজরুল ইসলাম) আমরা ডাঙ্গায়ে (পিটিয়ে) মারে ফেলাইছি। এইবার তোমাকে মারব, নৌকার ভোটে। তোমার বাঁচন নাই।’
তোফাজ্জল হোসেন আরও বলেন, ‘শেষ কথা একটাই ভালো জাতের কচু অল্প জালে সিজে (সেদ্ধ হয়)। আর অজাতের কচুতে যদি সারা রাত জাল দেওয়া হয় তবুও সিজে না। আর ডাবলু মিয়া (কাজী মাহমুদুর রহমান ডাবলু) এইবার ট্রাকোত ঢুকিছে। এইগুলা হচে অজাতের কচু। মেইন কথা, ভালো লোক ভালো হবে। এই বার ভালো করব।’
বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে কাজী মাহমুদুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিতে দলীয় কোনো বাধা নেই। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় করায় এভাবে হুমকি দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে আমি পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করছি, এই বক্তব্যের বিষয়ে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।’
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর বিষয়ে জানার জন্য নৌকার কর্মী তোফাজ্জল হোসেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এর অগে একটি নির্বাচনী সভায় কাজী মাহমুদুর রহমান আমাদের চোর-ডাকাত বলেছিলেন। এসব কথা শুনে মনের আবেগেই বক্তব্য দেওয়ার সময় এসব বলে ফেলেছি। আসলে এসব কথা আমার বলা ঠিক হয়নি। ভোট চলে গেলে তো আমাদের একই জায়গায় থাকতে হবে। এ জন্য আমাদের এসব বলা ঠিক নয়। এসব বিষয় নিয়ে লেখালেখি না করার অনুরোধ করছি।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় সাত বছর আগে তেঁতুলিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষের দলীয় কার্যালয়কে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় জাতীয় শ্রমিক লীগের তেঁতুলিয়া উপজেলা শাখার সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম, হাফেজসহ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। এর পর থেকে নজরুল ইসলাম প্রায়ই অসুস্থ থাকতেন। প্রায় তিন বছর পর নজরুল ইসলাম নামের ওই শ্রমিক লীগ নেতার মৃত্যু হয়। সেই নজরুল ইসলামকে মারার কথা বক্তব্যে উল্লেখ করেন তোফাজ্জল হোসেন।