রাতে পুলিশ কর্মকর্তার ‘আত্মহত্যা’, সকালে তাঁর সাবেক দেহরক্ষীর লাশ উদ্ধার
মাগুরার শ্রীপুর উপজেলায় একজন অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনারের (এডিসি) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর নাম খন্দকার লাবণী। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে উপজেলার সারঙ্গদিয়া গ্রামে তাঁর নানাবাড়ি থেকে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করা হয়। পরিবারের লোকজন তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
খন্দকার লাবণী খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এডিসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দুই দিন আগে ছুটিতে মাগুরায় আসেন তিনি। তিনি বিসিএস ৩০তম ব্যাচের ছিলেন।
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার সকালে মাগুরা পুলিশ লাইনস থেকে এক কনস্টেবলের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে পুলিশ লাইনসের ব্যারাকের ছাদ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। মাহমুদুল হাসান (২৩) নামের ওই কনস্টেবলের বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পিপলুবাড়িয়া গ্রামে। দেড় মাস আগে তিনি মাগুরায় বদলি হয়ে আসেন। পুলিশের ধারণা, নিজ নামে ইস্যু করা অস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন তিনি।
মাগুরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, কনস্টেবল মাহমুদুল হাসান দেড় মাস আগে মাগুরায় বদলি হন। এর আগে তিনি খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি খন্দকার লাবণীর দেহরক্ষী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দুটি ঘটনার কোনো যোগসূত্র আছে কিনা সেটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে এটুকু নিশ্চিত, দুজনেই আত্মহত্যা করেছেন। দুজনের আত্মহত্যার কারণ জানতে পুলিশ তদন্ত করছে। এ ছাড়া আইনগত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, খন্দকার লাবণীর বাড়ি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার বরালিদহ গ্রামে। তাঁর স্বামী তারেক আবদুল্লাহ বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক (এডি) হিসেবে কর্মরত। তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে এখন ভারতে চিকিৎসাধীন।
মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ কামরুল হাসান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাত ১২টার দিকে নানার বাড়িতে ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন খন্দকার লাবণী। বিষয়টি টের পেয়ে পরিবারের লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ কর্মকর্তার খন্দকার লাবণীর বাবা খন্দকার শফিকুল আজম আজ দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে তাঁদের স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণে দ্বন্দ্ব লেগে ছিল। এ কারণে একে অপরকে এড়িয়ে চলছিল। স্বামী-স্ত্রীর এই দ্বন্দ্বের কারণেই সে আত্মহত্যা করেছে। সে এর আগেও ১৫ দিন আগে ও সপ্তাহখানেক আগে দুবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে।’
অন্যদিকে, কনস্টেবলের বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, মাহমুদুল কাজ শেষে ভোরে ব্যারাকে ফিরে ছাদে গিয়ে নিজ নামে ইস্যু করা শটগান দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। গুলির শব্দ শুনে অন্যরা গিয়ে তাঁকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। তাঁর থুতনি দিয়ে গুলি ঢুকেছে। তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন, তা এখনো জানা যায়নি।
মাহমুদুল হাসানের বাবা মো. এজাজুল হক খান চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত। আজ দুপুরে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই বছর চার মাস আগে আমার ছেলে পুলিশে যোগ দেয়। দেড় মাস আগে মাগুরায় আসার আগে সে খুলনা মেট্রোপলিটনে কর্মরত ছিল। গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁর সঙ্গে মুঠোফোনে আমার সর্বশেষ কথা হয়। সে জানায় যশোর রোডে ডিউটিতে আছে। তাঁর সঙ্গে স্বাভাবিক ও হাসি-ঠাট্টামূলক কথা হয়। কিন্তু কী কারণে সে আত্মহত্যা করেছে সেটা বুঝতে পারছি না।’