চুয়েটের দুই শিক্ষার্থীকে লাঞ্ছিত করে অবমাননাকর ভিডিও ধারণের অভিযোগ

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)

চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীর হাতে মারধর ও লাঞ্ছিত হয়েছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থী। গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ এলাকার ৫ নম্বর গলিতে এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, মঙ্গলবার ওই দুই শিক্ষার্থী শহরে টিউশনের জন্য যান। এ সময় চট্টগ্রামের মুরাদপুর এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ শুরু হলে তাঁরা মেট্রো প্রভাতি বাসে ২ নম্বর গেটে নামেন। পরে ওখান থেকে তাঁদের ধাওয়া করলে তাঁরা নাসিরাবাদ এলাকার ৫ নম্বর গলিতে আশ্রয় নেন। তখন ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী তাঁদের সেখানে আটকিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা টিউশনে আসার সব প্রমাণ দেখানোর পরও তাঁদের মারধর করেন তাঁরা। মারধরের একপর্যায়ে তাঁদের (শিক্ষার্থী) পরনের কাপড় খুলে কানে ধরে ওঠবস করতে বাধ্য করেন। এরপর জোর করে চুয়েট থেকে তাঁদের আন্দোলনের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে বলে স্বীকারোক্তিও নেওয়া হয়।

দুই শিক্ষার্থীকে মারধর ও লাঞ্ছিত করার ভিডিও ধারণ করে রাখেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। পরে আজ বৃহস্পতিবার ভোরে মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি তাঁর ফেসবুক আইডি থেকে শিক্ষার্থী দুজনকে শিবির ও রাজাকার পরিচয় দিয়ে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নুরুল আজিম রনি বলেন, ‘চুয়েটের স্বঘোষিত দুজন রাজাকার চট্টগ্রাম শহরে এসে সহিংসতা করছিল। শিবিরের এ নব্য রাজাকারকে এ সময় জনগণ হাতেনাতে ধরেছিল। পরে তারা কান ধরে ওঠবস করে নিজেদের অপরাধের দায়মুক্তি চেয়েছে।’

সামাজিক মর্যাদার কথা ভেবে ভিডিওতে তাঁদের মুখ মুছে দেওয়ার ব্যাপারে উল্লেখ করেন রনি। তবে কমেন্টে কেউ তাঁদের পক্ষে কথা বললে চেহারা উন্মোচন করে ভিডিও প্রকাশ করার হুমকি দেন তিনি।

এ বিষয়ে লাঞ্ছনার শিকার এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘টিউশন করানোর জন্য আমরা কয়েকজন শহরে গিয়েছিলাম। আমার টিউশন ছিল মুরাদপুর। তখন মুরাদপুরে সংঘর্ষ শুরু হওয়ায় আমরা মেট্রো প্রভাতি বাস থেকে না নেমে ২ নম্বর গেট এলাকায় নামি। সেখান থেকে বিভিন্ন দিকে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া দেখে ফিনলে মার্কেটের পাশ দিয়ে আমরা দুজন নাসিরাবাদ ৫ নম্বর গলিতে আশ্রয় নিই। তখন সেখানে আমাদের ছাত্রলীগের তিনজন কর্মী জিজ্ঞাসাবাদ করেন। আমরা টিউশনে এসেছি বললে আমাদের ফোন নিয়ে চেক করে এর প্রমাণ চান। তখন আমরা এর পক্ষে প্রমাণ দিলে প্রথমে আমাদের দৌড়ে পালিয়ে যেতে বলেন। আমরা চলে যেতে লাগলে আবার তাঁরা পেছন থেকে আমাদের ডেকে নিয়ে আসেন। তখন তাঁরা আমাদের মারধর করে শরীরের কাপড় খুলে কানে ধরিয়ে ওঠবস করান। এ অবস্থায় ভিডিও করে রাখেন তাঁরা। প্রায় ৪০ মিনিট পর তাঁরা আমাদের ছেড়ে দেন। আজ তাঁরা আমাদের এই ভিডিও প্রকাশ করে আমাদের সামাজিকভাবে হেয় করেছেন। আমরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি চাই। আমরা আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।’

জানতে চাইলে নুরুল আজিম রনি বলেন, ‘ওরা শিবির, এটা নিশ্চিত। তবে তাঁরা কান্নাকাটি করায় আমি ফেসবুকে ভিডিওটি অনলি মি করে রেখেছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চুয়েটের উপাচার্য মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, ‘বিষয়টি ছাত্রকল্যাণ দপ্তর থেকে আমাকে জানানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন ও শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি পর্যালোচনা করে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেব। তবে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে এখন তাঁদের হল ছাড়ার যে নির্দেশনা রয়েছে, সেটি মানতে হবে।’