ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছাত্রলীগ কর্মীকে গুলি করে হত্যায় জড়িতদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে গুলি করে ছাত্রলীগ কর্মী আশরাফুল রহমান ওরফে ইজাজ (২২) হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরাসহ নিহত আশরাফুলের বন্ধুমহল এই মানববন্ধনের আয়োজন করে। নিহত আশরাফুল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কলেজপাড়ার আমিনুর রহমানের ছেলে এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের স্নাতক (সম্মান) উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি জেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী এবং সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন ওরফে শোভনের (আনারস প্রতীক) পক্ষের কর্মী ছিলেন।
চতুর্থ ধাপে গত বুধবার (৫ জুন) ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর সন্ধ্যায় আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকেরা আনন্দমিছিল বের করেন। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে জেলা শহরের কলেজপাড়ায় ওই মিছিলে গুলি করা হয়। এতে মিছিলে থাকা ছাত্রলীগ কর্মী আশরাফুল রহমান গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। মিছিলে থাকা ছাত্রলীগের অপর একটি পক্ষ এই গুলি করে।
এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আজ দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীসহ নিহত আশরাফুলের বন্ধুরা। এ সময় তাঁদের হাতে আশরাফুল হত্যা মামলার সাত আসামির ছবি সংবলিত ব্যানার ছিল। মিছিলটি জেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়ায়। সেখানে মিছিলকারীরা মানববন্ধন করেন। এ সময় বক্তব্য দেন জেলা ছাত্রলীগর সাংগঠনিক সম্পাদক আজহারুল হাসান, নিহত আশরাফুলের সহপাঠী বায়েজিদুর রহমান, মাহতি মোহাম্মদ মাশরাফি, সাকিব খান, আরাফ উল্লাহ প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে ছিলেন আশরাফুল। ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা যান। কেন এখন পর্যন্ত প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। হত্যাকাণ্ডের ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় পার হলেও এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। মূল আসামিরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তাঁরা। তাঁরা বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হাসান আল ফারাবী জয়সহ অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তার করা না হলে তাঁরা ধর্মঘট ও বিক্ষোভ মিছিল করবেন।
মানববন্ধনে সবার পক্ষ থেকে নিহত আশরাফুলের সহপাঠী বায়েজুদুর রহমান চারটি দাবি উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, প্রথম দাবি— আসামি হাসান আল ফারাবি ওরফে জয়কে দ্রুত গ্রেপ্তার করে ফাঁসির আওতায় আনতে হবে। দুই, ঘটনার মূল ইন্ধনদাতা শীর্ষ ক্যাডার, অস্ত্রের জোগানদাতা আসামি জালাল হোসেন ও হাসানের সহযোগীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। তিন, আশরাফুলের পরিবারের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। কারণ, আশরাফুল তাঁর মা–বাবার একমাত্র ছেলে। চার, নির্বাচনে প্রশাসন ও এত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকা সত্ত্বেও কেন প্রকাশ্য দিবালোকে আশরাফুল খুন হবেন? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বে কোনো অবহেলা হয়েছে কি না, তার জবাবদিহি প্রশাসনকে করতে হবে।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে নিহত আশরাফুলের বাবা বাদী হয়ে ১৬ জনকে আসামি করে সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার প্রধান আসামি ছাত্রলীগের সাবেক নেতা জালাল হোসেন ওরফে খোকা। আসামির তালিকায় ২ নম্বরে রয়েছেন বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা হাসান আল ফারাবী ওরফে জয়। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামি হাসান আল ফারাবীও নির্বাচনে বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহাদাৎ হোসেনের (আনারস প্রতীক) পক্ষে কাজ করেছেন।
এজাহারভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন শহরের কলেজপাড়ার বাসিন্দা জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি শাফি আলম (২৮) ও তাঁর বড় ভাই সাগর (৩২), কাউতলীর শাহাদাৎ হোসেন ওরফে সানি (২৮), কলেজপাড়ার অপু (৩০), তাঁর বড় ভাই মামুন (৩৮) ও মাসুম (৪০) এবং মামুনের ছেলে শাহরিয়ার ওরফে লাদেন (২২), রুবেল (২৮), অলি (৩০), রুমান (৩৫), তারেফ (৩০), সৌরভ (৩০), মামুন (২৮) ও মুরসালিন (২৮)। জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতির পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার হওয়া হাসানসহ অন্য আসামিরা জালাল হোসেনের অনুসারী। কলেজপাড়ার বাসিন্দা জালাল হোসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি এবং জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
মানবন্ধনে তোলা অভিযোগের ব্যাপরে জানতে চাইলে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসলাম হোসেন আজ প্রথম আলোকে বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে।