মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সম্পদ ১০ বছরে ১০২ কোটি বেড়েছে
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম পেশায় একজন ব্যবসায়ী। ১০ বছর আগে তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৬ কোটি টাকার কিছু বেশি। এখন তা ১১৮ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। শুধু বন্ডেই তাঁর বিনিয়োগ ৮০ কোটি টাকা।
দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে তাজুল ইসলামের দাখিল করা হলফনামা বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পাওয়া গেছে। এবারের হলফনামায় তিনি স্ত্রী ও তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের আয় কিংবা সম্পদের কোনো তথ্য উল্লেখ করেননি। মন্ত্রী এখন বছরে আয় করেন ৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা। ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও তাঁর আয় ৪ কোটি টাকার কিছু বেশি ছিল।
তাজুল ইসলাম কুমিল্লা-৯ (লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ) আসন থেকে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী হন। তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। মন্ত্রী হওয়ার আগে ২০১৮ সালে তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৪৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। চার বছরের ব্যবধানে সেই সম্পদ দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। শোধ করেছেন ৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকার ঋণও।
হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মন্ত্রী তাজুল ইসলামের কৃষি খাত থেকে আয় বেড়েছে। এবার এই খাতে তাঁর বার্ষিক আয় ৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে ছিল ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এ বছর বাড়িভাড়া বাবদ আয় হয়েছে ১ কোটি ৬৯ লাখ ৯৩৯ টাকা। ২০১৮ সালে ছিল মাত্র ২২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা এবং ২০১৪ সালে ছিল ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
তবে এবার শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে আয় কমেছে তাজুল ইসলামের। এই খাতে তিনি আয় করেছেন ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, যা ২০১৮ সালে ছিল ২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। ২০১৪ সালে ছিল দেড় কোটি টাকা। ব্যবসা থেকেও আয় কমে ১৬ লাখ থেকে ১৪ লাখে নেমেছে।
তাজুল ইসলাম এবার সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানী দেখিয়েছেন ১৫ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে উল্লেখ করেছিলেন ২৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ফিশিং ও পোলট্রি (মাছ ও মুরগি) খাতে আয় বেড়ে ৪৩ লাখ থেকে ৫১ লাখে দাঁড়িয়েছে। ২০১৪ সালে এই খাতে তাঁর আয় ছিল না।
শেয়ার কমিয়ে বন্ডে ঝুঁকেছেন মন্ত্রী
অস্থাবর সম্পদের ক্ষেত্রে তাজুল ইসলাম বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন বন্ডে, যার পরিমাণ ৮০ কোটি টাকা। ৫ বছর আগে যা ছিল ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা। সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগেও বড় লাফ দেখা গেছে। ২০১৮ সালে যেখানে ৬১ লাখ টাকার বিনিয়োগ ছিল, এখন তা দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৭৩ লাখে। ২০১৪ সালে ছিল ৩৩ লাখ।
তবে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ কমিয়ে ৫ বছরে ১৬ কোটি ৬৬ লাখ থেকে ৫ কোটি ২৩ লাখে নামিয়েছেন। মন্ত্রীর হাতে নগদ টাকাও কমেছে। ২০১৮ সালে যেখানে তাঁর হাতে ১ কোটি ৩১ লাখ টাকা ছিল, এখন তা দাঁড়িয়েছেন ৮ লাখ ৫২ হাজারে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তাঁর জমা টাকা আছে ১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে ছিল ৩ কোটি ৮৯ লাখ।
মন্ত্রী তাজুল ইসলামের থাকা গাড়ির মোট মূল্য ৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। ২০১৪ সালে তাঁর ১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা মূল্যের একটি জিপ ও একটি কার ছিল, যা তিনি ২০১৮ সালেও উল্লেখ করেছিলেন।
জমিজমা বেড়েছে, শোধ হয়েছে ঋণ
২০১৮ সালের হলফনামায় তাজুল ইসলাম ৭ দশমিক ৬৭ একর কৃষিজমি থাকার কথা বলেছিলেন, যার মূল্য ছিল অর্জনকালীন মূল্য ছিল ২০ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। এবার তিনি জানিয়েছেন, তাঁর ১ কোটি ৫১ লাখ টাকা মূল্যের কৃষিজমি আছে। তবে এবার তিনি জমির পরিমাণ উল্লেখ করেননি।
মন্ত্রীর দালান, বাড়ি, চা–বাগান, রবারবাগান ও মৎস্য খামারের আর্থিক মূল্য ২০ কোটি ৪ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে যার পরিমাণ ছিল ৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা এবং ২০১৪ সালে ছিল ২ কোটি ৬৭ লাখ। তিনি ২০১৮ সালে ৮ দশমিক ৬৭ একর অকৃষিজমি থাকার কথা উল্লেখ করেছিলেন। এবার তা নেই।
তাজুল ইসলাম এবারের হলফনামায় অগ্রিম বাড়িভাড়া বাবদ নেওয়া ৪ কোটি ৯ লাখ টাকাকে দায় হিসেবে দেখিয়েছেন। ২০১৮ সালে সাউথ ইস্ট ব্যাংকে তাঁর ঋণ ছিল ৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এবার সেই ঋণ নেই।
তাজুল ইসলাম হলফনামায় বলেছেন, তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে এলাকার সার্বিক উন্নয়ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রায় সব ক্ষেত্রে উন্নয়ন করেছেন।