ইসলামিক ইউনিভার্সিটির হতাহত শিক্ষার্থীরা বিদ্যুতায়িত বাসের দরজার দিকে ছিলেন
বনভোজনে যাওয়ার পথে গাজীপুরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির হতাহত শিক্ষার্থীরা বিদ্যুতায়িত বাসের দরজার দিকে ছিলেন বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। আজ শনিবার দুর্ঘটনায় হতাহতের খবরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন। এদিকে এ ঘটনায় গাজীপুর জেলা প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তিনজনকে মৃত অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। এই হাসপাতালে এখন দুজন চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালে গিয়ে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষকেরা তিনটি গাড়িতে এবং শিক্ষার্থীরা পাঁচটি দ্বিতল বাসে করে যাচ্ছিলেন। বহরটিতে প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী ছিলেন। পেছনের বাসটি বিদ্যুতায়িত হয়। এ সময় যাঁরা বাসের দরজার দিকে ছিলেন, তাঁরা হতাহত হন। ভেতরের দিকে যারা ছিলেন, তাঁদের কিছু হয়নি।
এ ঘটনার দায় কার—এমন প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। রাস্তায় বের হলে যদি এমন ঘটনা ঘটে, তাহলে এর দায়িত্ব কার, তা আপনারাই ভালো বোঝেন। ছাত্ররা পিকনিকে যাবে, এটাই স্বাভাবিক। একটি ছেলে যদি গাড়িতে দাঁড়িয়েও নিরাপদ না থাকে, তখন কী করবেন! যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে, রাস্তা যেন ক্লিয়ার থাকে, ইলেকট্রিক্যাল তার যেন ওপরে থাকে, সেগুলোতে যেন লিকেজ না থাকে; সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভূমিকা রাখতে হবে।’
বনভোজনে যাওয়ার পথটি দ্বিতল বাস চলাচলের উপযুক্ত না হলেও কেন শিক্ষার্থীদের এই বাসে করে নেওয়া হচ্ছিল—এমন প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট বিভাগ কেন ডাবল ডেকারের বাস ভাড়া নিল এবং সেই সড়কে ডাবল ডেকারের অনুমতি নেই, সেটি আমার জানা নেই। যারা বাস ভাড়া দেয়, সেই বিআরটিসি তো ভালো জানবে বিষয়টি। রাস্তা দিয়ে ডাবল ডেকারের বাস যেতে পারবে কি পারবে না, এটি বিআরটিসির দায়িত্ব।’
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল অ্যান্ড প্রডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বার্ষিক বনভোজন ছিল আজ। গাজীপুরের শ্রীপুরে জৈনাবাজারের একটি রিসোর্টে যাওয়ার পথে উদয়খালী এলাকায় বনভোজনের বহরের একটি দ্বিতল বাস বিদ্যুতায়িত হয়। আজ সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। রিসোর্ট থেকে আধা কিলোমিটার দূরে বহরে থাকা পাঁচ নম্বর বাসটি বিদ্যুতায়িত হয়। ওই সময় বাসের দরজার দিকে থাকা তিনজন বিদ্যুতায়িত হয়ে গুরুতর আহত হন। তাঁদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। আহত দুজনকে এই হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
নিহত তিন শিক্ষার্থী হলেন ফেনীর মাস্টারপাড়া এলাকার মোতাহার হোসেনের ছেলে মীর মোজাম্মেল (২৩), রাজশাহীর রাজপাড়া ডিঙ্গাবো এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে জোবায়ের আলম (২২) এবং রংপুর সদরের ইমতিয়াজুর রহমানের ছেলে মুবতাছিন রহমান (২২)। আহত ঢাকার মিরপুরের কাজীপাড়া এলাকার কাবিদুল ইসলাম (২২) ও ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকার নাফিজ আ খান (২২) চিকিৎসাধীন। হতাহত শিক্ষার্থীরা সবাই মেকানিক্যাল অ্যান্ড প্রডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার গোলাম ফেরদৌস বলেন, তিনজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। দুজনকে আহত অবস্থায় ভর্তি আছে। তাঁদের অবস্থা গুরুতর নয়। নিহত তিনজনের মরদেহ মর্গে আছে।
দুই তদন্ত কমিটি গঠন
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সহ-উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) মো. রাকিবুল ইসলামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সালমা খাতুনকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব আহমেদ, শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদিন মণ্ডল ও পল্লী বিদ্যুতের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম)।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল অ্যান্ড প্রডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক আরাফাত আহাম্মেদ ভূঁইয়া বলেন, ‘রিসোর্টের কাছাকাছি চলে গিয়েছিলাম। ঠিক তার কিছু আগে দুর্ঘটনাটি ঘটে। আমরা নিহত শিক্ষার্থীদের স্বজনদের খবর দিয়েছি। আমরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি।’
বেলা দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে গিয়ে জানা গেল, বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিন। তাই শিক্ষার্থী নেই। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে শিক্ষকেরা ক্যাম্পাসে এসেছেন।