ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারছেন না আমদানিকারক
পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে পেঁয়াজ আমদানি করলে ভালো দাম পাবেন, এমন আশায় ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেছিলেন আমদানিকারক আহম্মেদ সরকার। ক্রয়মূল্য, শুল্ক, পরিবহন, অন্যান্য খরচসহ আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কেজিতে পড়েছিল প্রায় ৬২ টাকা। স্থানীয় বাজারে এর চেয়ে কম দামে দেশি জাতের ভালো মানের পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে এখন। এর ফলে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ে আছে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারকের গুদামে।
হিলি স্থলবন্দর পরিচালনাকারী পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেড সূত্রে জানা যায়, ১৪ মে সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে একটি ভারতীয় ট্রাকে ৩০ মেট্রিক টন ভারতীয় পেঁয়াজ বাংলাদেশে প্রবেশ করে। মেসার্স আরএসবি এন্টারপ্রাইজ নামের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান হিলি স্থলবন্দরের দাস অ্যান্ড সন্স নামের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের মাধ্যমে এসব পেঁয়াজ আমদানি করে।
বুধবার বিকেলে সরেজমিন হিলি স্থলবন্দরের উপজেলা সড়কে মেসার্স আরএসবি এন্টারপ্রাইজের গুদামে দেখা যায়, গুদামে প্লাস্টিকের লাল রঙের বস্তায় সারিবদ্ধ করে রাখা আছে ৩০ টন পেঁয়াজ। এসব পেঁয়াজে ফ্যান দিয়ে বাতাস দেওয়া হচ্ছে। আট দিন ধরে ভারত থেকে আমদানি করা এসব পেঁয়াজের ক্রেতা নেই। গুদামে এসব পেঁয়াজ এভাবে অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে থাকলে খুব কম সময়ের মধ্যেই পেঁয়াজগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। এতে বড় ধরনের লোকসানে পড়বেন বলে জানালেন আমদানিকারক আহম্মেদ সরকার।
ভারত সরকার যদি পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার না করে অথবা শুল্কের পরিমাণ না কমায়, তাহলে পেঁয়াজ আমদানিকারকেরা কেউই লোকসানের ভয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করবেন না। এখন পেঁয়াজ আমদানি করলে আমদানিকারকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
আহম্মেদ সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৪ মে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে একটি ট্রাকে নাসিক জাতের ৩০ টন পেঁয়াজ আমদানি করি। এসব পেঁয়াজ ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার পতিরাম থেকে এসেছে। পেঁয়াজ আমদানি করতে ভারত সরকারের বেঁধে দেওয়া শুল্কের ৪০ শতাংশ হারে ৫ লাখ ৪৬ হাজার ১৬০ রুপি পরিশোধ করতে হয়েছে। বাংলাদেশি টাকায় যা প্রতি কেজিতে প্রায় ২৫ টাকা। এ ছাড়া পেঁয়াজ আমদানিতে বাংলাদেশে প্রতি কেজিতে ৬ টাকা ৩৪ পয়সা শুল্ক দিতে হয়েছে। আর ভারতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ কেনা পড়েছে প্রায় ৩০ টাকা। সেই হিসাবে সব খরচ মিলিয়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ আমদানিতে প্রায় ৬২ টাকা খরচ পড়েছে। আর বাংলাদেশে স্থানীয় বাজারে দেশি জাতের পেঁয়াজ এখন ৬০ থেকে ৬২ টাকা পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে। বেশি দামে পেঁয়াজ আমদানি করে এখন কেনা দামে পেঁয়াজ বিক্রির ক্রেতাও পাচ্ছি না। আট দিন ধরে গুদামে পেঁয়াজ পড়ে আছে। ফ্যানের বাতাস দিয়ে এখন বাঁচানোর চেষ্টা করছি।’
হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সহসভাপতি শাহীনুর রেজা প্রথম আলোকে বলেন, ভারত সরকার যদি পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার না করে অথবা শুল্কের পরিমাণ না কমায়, তাহলে পেঁয়াজ আমদানিকারকেরা কেউই লোকসানের ভয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করবেন না। এখন পেঁয়াজ আমদানি করলে আমদানিকারকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ভারতে পেঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্ক কমানোর জন্য ভারত সরকারের কাছে আবেদন পাঠাতে দুই দেশের আমদানি ও রপ্তানিকারকদের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের জন্য একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
হিলি স্থলবন্দরের পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেড সূত্রে জানা যায়, সবশেষ গত ৯ ডিসেম্বর হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ২টি ট্রাকে ৫৯ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল। পরে ভারত সরকার পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করে দেয়।
হিলি স্থলবন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপসহকারী সঙ্গনিরোধ কর্মকর্তা ইউসুফ আলী প্রথম আলোকে জানান, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করার জন্য ৪০টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ৪৭ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি (আইপি) দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
হিলি সবজি বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী শাকিল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ঈদকে সামনে রেখে হিলি বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। পাবনার বিভিন্ন মোকাম থেকে হিলিতে পেঁয়াজ আসছে। বাজারে প্রকারভেদে প্রতি কেজি দেশি জাতের পেঁয়াজ পাইকারি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বিরামপুর পৌর শহরের নতুনবাজার এলাকায় পেঁয়াজের পাইকারি ব্যবসায়ী বাবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদকে সামনে রেখে বিরামপুরের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৩ টাকা দরে বিক্রি করছি। রাজশাহীর তাহেরপুর, পাবনা, ফরিদপুর ও কুষ্টিয়ার বিভিন্ন মোকাম থেকে প্রচুর পরিমাণে দেশি জাতের পেঁয়াজ বিরামপুরের পাইকারি বাজারে আসছে। পেঁয়াজের সরবরাহ আরও বাড়বে।’