খুলনায় ধর্ষণের অভিযোগ করা তরুণীকে হাসপাতাল চত্বর থেকে অপহরণ
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসির (ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার) সামনে থেকে আজ রোববার বিকেল পাঁচটার দিকে এক তরুণীকে অপহরণ করা হয়েছে।
তরুণীর পরিবার খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এজাজ আহমেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করে বলছে, তারা আইনি ব্যবস্থা নিতে চেয়েছিল। এ কারণে ওসিসি থেকে চিকিৎসকের প্রতিবেদন নিতে গিয়েছিল।
উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদের মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যাওয়ায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুজিত অধিকারী বলেন, কিছুদিন আগে নির্বাচন হয়ে গেছে। সাধারণত দেখা যায়, নির্বাচনের পর প্রতিপক্ষ বা পক্ষের লোকজন একে অপরকে ফাঁসাতে চেষ্টা করেন। এ ক্ষেত্রে তেমনটা হতে পারে। তা ছাড়া মেয়েটি থানা বা জেলা আওয়ামী লীগের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে এজাজ আহমেদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওই তরুণী (২৪) একটি কলেজে স্নাতকে পড়েন। গতকাল শনিবার রাত সোয়া ১১টায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি হন তিনি। তখন তরুণীর পরিবার চিকিৎসকদের অভিযোগ করে বলেছে, সন্ধ্যায় ডুমুরিয়া উপজেলার শাহপুরে অবস্থিত উপজেলা চেয়ারম্যান তাঁর ব্যক্তিগত কার্যালয়ে তরুণীকে ধর্ষণ করেছেন।
ধর্ষণের খবর শুনে তরুণীকে সহায়তা করতে আজ হাসপাতালে গিয়েছিল বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার একটি প্রতিনিধিদল। সংস্থাটির খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মোমিনুল ইসলাম বলেন, ওসিসির সামনে আগে থেকে একটি মাইক্রোবাস নিয়ে ১০–১২ জন উপস্থিত ছিলেন। ওই তরুণী ছাড়পত্র নিয়ে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে জোর করে গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়েছে। ওই সময়ে তাঁদের সংস্থার সদস্যদেরও মারধর করা হয়েছে। এ ঘটনার ছবি তুলতে গেলে রুদাঘরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তৌহিদুজ্জামান কয়েকজনকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছেন। তৌহিদুজ্জামান উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদের চাচাতো ভাই।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ও ওসিসির সমন্বয়কারী সুমন রায় বলেন, ধর্ষণের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষা করেছেন গাইনি ওয়ার্ডের চিকিৎসকেরা। ওই পরীক্ষায় যেসব প্রমাণ পাওয়া গেছে, তা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। পরে তা প্রতিবেদন আকারে জমা দেবেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দুপুরের দিকে ডুমুরিয়া থানায় যোগাযোগ করেছিল। থানা থেকে পরিদর্শক (তদন্ত) হাসপাতালে এসে মেয়েটির সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি মেয়েটিকে থানায় অভিযোগ করার কথা বললেও মেয়েটি রাজি হননি। মেয়েটি আদালতে মামলা করতে আগ্রহী ছিলেন।
সুমন রায় আরও বলেন, ‘মেয়েটির শারীরিক অবস্থা তত খারাপ ছিল না। এ কারণে বিকেলের দিকে মেয়েটিকে তাঁর মা ও মামার জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে শুনেছি, তাঁকে নাকি অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) আওতাধীন। জানতে চাইলে কেএমপির উপকমিশনার (দক্ষিণ) তাজুল ইসলাম বলেন, তাঁরা ওই তরুণীকে অপহরণের সংবাদ পেয়েছেন। পুলিশের একাধিক ইউনিটকে সতর্ক করা হয়েছে। ওই তরুণীকে অপহরণের সঙ্গে জড়িত সবাইকে তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাজুল আরও বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান তৌহিদুজ্জামান অপহরণের সঙ্গে জড়িত আছেন বলে তাঁরা অভিযোগ পেয়েছেন। সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সন্ধ্যায় তাঁকে সোনাডাঙ্গা থানায় নিয়ে আসা হয়। তবে তাঁকে আটক করা হয়নি। মেয়ের পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন তাঁরা।
ভুক্তভোগী তরুণীর ভাই বলেন, চেয়ারম্যানের সঙ্গে তাঁর বোনের সখ্য গড়ে উঠলে কয়েক বছর ধরে ধর্ষণ করে আসছেন এজাজ। তাঁর বোন ছয় মাস আগে ঘটনাটি পরিবারকে জানায়। তবে তাঁরা সম্মানের ভয়ে বিষয়টি কাউকে বলেননি। গতকাল রাত আটটার দিকে নিজ কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে তাঁর বোনকে আবার ধর্ষণ করেন এজাজ আহমেদ। তখন তাঁর বোন বিয়ের দাবি করলে দুজনের মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তাঁর বোনকে তাড়িয়ে দেন এজাজ।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আসিফ ইকবাল বলেন, ‘আমাদের কাছে এ পর্যন্ত ওই তরুণী বা তাঁর পরিবারের কেউ আসেননি। কেউ একজন অভিযোগ দিলে পুলিশ তাঁকে আইনি সহায়তা দিতে বাধ্য।’