আর্থিক অনটনে অনিশ্চয়তায় মিমির মেডিকেলে ভর্তি
দিনমজুরের কাজ করে পাঁচজনের সংসার চালান মো. আফসারউদ্দিন সরদার। দারিদ্র্যের সংসারে আনন্দের উপলক্ষ এনে দিয়েছে তাঁর মেয়ের মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার খবর। তবে সেই আনন্দের সঙ্গে আছে দুশ্চিন্তাও। মেডিকেল কলেজে ভর্তির টাকা এবং ভবিষ্যতের দিনগুলোতে মেয়ের খরচের বিষয়টি তাঁকে এ দুশ্চিন্তায় ফেলেছে।
আফসারউদ্দিন সরদারের বাড়ি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়নের নোয়াগ্রামে। তাঁর বড় মেয়ে মিমি আক্তার এবার বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। মেধাতালিকায় তিনি ২ হাজার ১১৬তম স্থান পেয়েছেন।
লোহাগড়া উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে নোয়াগ্রামের অবস্থান। গত শনিবার আফসারউদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। ছোট একখণ্ড জমিতে তাঁদের পৈতৃক বসতভিটা। সেখানে দুটি ছোট টিনের ঘর। একটি ঘরে একটি কক্ষ ও বারান্দা, আরেক ঘরে একটি কক্ষ। রাতে খোলা বারান্দায় থাকেন বাবা ও মা। ঘরে থাকেন দুই বোন।
আফসারউদ্দিন সরদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব দিন কাজ পাওয়া যায় না। বাড়ির মধ্যি ছোট ছোট কিছু কাঠের গাছ ছেল। সংসার চালাতি তা বিক্রি করে দিছি। এবার শীতের কাপড়ের দরকার ছেল ছাওয়াল মায়ের, তাও কিনে দিতে পারি নেই। শুনলাম, মেডিকেলে ভর্তি হতি ২৫ হাজার টাকা লাগবি। দুডে দেবদার গাছ আছে, তা বিক্রির জন্য খরিদ্দার দেখাইছিলাম। ১২ হাজার টাকা বলিছে। ভর্তিতি তো আরও ১৩ হাজার লাগবি। ভর্তি করেও বা কীভাবে খরচ চালাব? তাই ভর্তি করতি পারব কি না, পড়াতি পারব কি না, তাই ভাবছি।’
তিন ভাই-বোনের মধ্যে মিমি আক্তার বড়। তিনি স্থানীয় নবগঙ্গা ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি ও দিঘলিয়া আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। অর্থাভাবে লড়াই করেই তাঁকে এ পর্যন্ত পড়ালেখা চালিয়ে আসতে হয়েছে। মিমি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হব; কিন্তু সাইন্সে পড়লে অনেক খরচ, অসচ্ছলতার কারণে সাইন্সে পড়তে চাইনি। তারপরও ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নে স্কুল-কলেজের স্যারদের উৎসাহ ও সহযোগিতায় পড়েছি। মা বলতেন পড়াশোনাই তোমাদের প্রধান হাতিয়ার। মা-বাবার বড় সন্তান আমি। তাঁদের মুখের দিকে তাকিয়ে পড়েছি। এখন মেডিকেলে ভর্তি হওয়া ও পড়াশোনার খরচ চালিয়ে নেওয়া পরিবারের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই ভর্তি হতে পারব কি না, সেই দুশ্চিন্তায় আছি।’
নবগঙ্গা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. মোশারেফ হোসেন বলেন, ‘মিমি আক্তার খুব পড়ুয়া মেয়ে। স্কুল ও কলেজের শিক্ষকদের সহযোগিতায় তাঁর পড়াশোনা চলেছে। কিন্তু মেডিকেলে তো অনেক খরচ। বাইরে থাকতে হবে। সব মিলে ওই পরিবারের পক্ষে পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। সুযোগ পেলে দেশের মুখ উজ্জ্বল করার মতো মেধাবী মেয়েটি। তাঁর পড়াশোনার জন্য বিত্তবানদের এগিয়ে আসা দরকার।’