রংপুরের হাঁড়িভাঙা নিয়ে অনলাইন আমের বাজারে নারীরা

আমপ্রেমীদের পছন্দের তালিকায় আছে রংপুরের হাঁড়িভাঙা আমছবি: প্রথম আলো

রংপুরের নারী কেয়া তালুকদার। আগে ঢাকায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় চাকরি করতেন। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ফিরে আসেন রংপুরে। নতুন করে চাকরির পেছনে না ছুটে হয়েছেন উদ্যোক্তা। চার বছর ধরে অনলাইনে হাঁড়িভাঙা আম বিক্রির ব্যবসা করছেন।

শুধু কেয়া তালুকদার নন, তাঁর মতো রংপুরের আরও অনেক নারী উদ্যোক্তা অনলাইনে আমের ব্যবসায় যুক্ত হচ্ছেন। এখানকার অন্তত ৫০ জন নারী অনলাইনে আম বিক্রি করছেন।

রংপুরের হাঁড়িভাঙা আমের খ্যাতি আছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এই আম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই আম সুস্বাদু ও আঁশবিহীন। ২০ জুন থেকে পুরোদমে হাঁড়িভাঙা বেচাকেনা শুরু হয়েছে।

রংপুর উন্নয়ন ফোরাম নামের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিবছর অনলাইনে আম বিক্রির একটি জরিপ করা হয়। তাদের ভাষ্যমতে, চার বছর আগে অনলাইনে আম বিক্রির সঙ্গে যুক্ত নারীর সংখ্যা ছিল মাত্র চার। এবার এই সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়েছে। শুধু হাঁড়িভাঙা আম নয়, বছরের মৌসুমি ফলের ব্যবসাও করছেন তাঁরা। এতে তাঁরা নিজেরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন, অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখছেন।

কেয়া তালুকদার বলেন, ‘ব্যবসার শুরুতে তেমন লাভ না হলেও এখন হাঁড়িভাঙা আমের ব্যবসা জমজমাট। চাষিদের সঙ্গে চুক্তি করে আমবাগান কিনি। এখন লাভও বেশ হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে ১০ মণের বেশি আম বিক্রি হয়েছে। এবার ১০০ মণের বেশি আম বিক্রির সম্ভাবনা আছে।’

অনলাইনে আরেক আম বিক্রেতা উম্মে কুলসুম (২৩)। তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করেছেন। এরপর চাকরি না করে ব্যবসা শুরু করেন। ২০২১ সালে অনলাইনে হাঁড়িভাঙা আমের ব্যবসা শুরু করেন। তাঁর দাবি, গত বছর হাঁড়িভাঙা আমের ব্যবসায় লেনদেন হয়েছে ৭০ লাখ টাকার ওপরে। এ বছর এটা আরও বাড়বে বলে আশাবাদী তিনি।

উম্মে কুলসুম বলেন, এই ব্যবসায় খুব একটা পুঁজির প্রয়োজন হয়নি। তবে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়েছে। নিজেই ফোন করে আমের অর্ডার নিতেন।

রংপুরের সুস্বাদু হাঁড়িভাঙা আম
ছবি: প্রথম আলো

নাসরিন আক্তার রংপুর শহরে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি অনলাইনে হাঁড়িভাঙা আমের ব্যবসা করছেন। ২০২০ সাল থেকে শুরু করা এই ব্যবসায় তাঁর সাফল্যও এসেছে। দিনে শিক্ষকতা করেন, রাতে অনলাইনে ব্যবসার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ক্রেতাদের ফোন করে অর্ডার নেন। কর্মচারীদের মাধ্যমে আম পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। তিনি বলেন, আমচাষিদের সঙ্গে চুক্তি করে বাগান কেনেন। সাতজন কর্মচারীর মাধ্যমে ইতিমধ্যে ১০ মণ আম অনলাইনে বিক্রি করেছেন। আশা করছেন এবার বিক্রি ১০০ মণ ছাড়িয়ে যাবে।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর রংপুর জেলায় ৩ হাজার ৩৩৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাঁড়িভাঙা আমের চাষ করা হয়েছে ১ হাজার ৯০৫ হেক্টর জমিতে। এ বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ হাজার মেট্রিক টন।

এই ব্যবসায় খুব একটা পুঁজির প্রয়োজন হয়নি। তবে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়েছে। নিজেই ফোন করে আমের অর্ডার নিতেন।
উম্মে কুলসুম, অনলাইনে আমবিক্রতা

রংপুর বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, তরুণ-যুবকদের পাশাপাশি নারীরাও অনলাইনে আমের ব্যবসায় যুক্ত হচ্ছেন। তাঁদের দেখাদেখি আরও অনেকেই মৌসুমি ফল ব্যবসার মাধ্যমে উদ্যোক্তা হয়ে উঠছেন।