নিহত স্কুলছাত্রী মুক্তি বর্মণের বড় বোনকে চাকরি দিলেন জেলা প্রশাসক
নেত্রকোনার বারহাট্টায় উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করতে গিয়ে এক তরুণের হাতে খুন হওয়া স্কুলছাত্রী মুক্তি বর্মণের (১৫) বড় বোন নিপা বর্মণকে (২৩) চাকরি দিয়েছেন নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। আজ মঙ্গলবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নেজারত শাখায় আউটসোর্সিংয়ে নিপাকে চাকরি দেওয়া হয়। নিপা বর্মণ এবার নেত্রকোনা সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেছেন।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে নিহত মুক্তির বাবা নিখিল বর্মণসহ তাদের পরিবারের সদস্যরা জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা করেন। এ সময় তাঁরা জেলা প্রশাসকের কাছে মুক্তি হত্যার ন্যায়বিচার পেতে সব ধরনের সহযোগিতা চান। জেলা প্রশাসক দীর্ঘক্ষণ তাঁদের কথা শোনেন।
জেলা প্রশাসক জানতে পারেন, মুক্তির আরও পাঁচ বোন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করছেন। তাঁদের পড়াশোনা অব্যাহত রাখতে সব রকমের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তা ছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর কার্যালয়ের নেজারত শাখায় মুক্তির বড় বোন নিপা রানি বর্মণের জন্য চাকরির (আউটসোর্সিংয়ে) ব্যবস্থা করেন জেলা প্রশাসক।
সার্বিক বিষয় জেলা প্রশাসককে অবগত করেন বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মাজহারুল ইসলাম। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি সীতাংশু বিকাশ আচার্য, জেলা পূজা উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক লিটন পণ্ডিত, বারহাট্টা উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি দীপক কুমার সাহা প্রমুখ।
প্রথম আলোকে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, ‘মুক্তি হত্যার ঘটনাটি আমাদের মনে কঠিন দাগ কেটে গেছে। এই সময়ে তার পরিবারটির পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব। প্রশাসনে চাকরির সঙ্গে কিছু মানবিক দায়িত্বও রয়েছে আমাদের। সে দায়িত্ব থেকেই তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তির বড় বোনের জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা করেছি। এতে পরিবারটি কিছুটা হলেও অর্থনৈতিকভাবে সহায়তা পাবে। তা ছাড়া পরিবারটিও আমাদের সুনজরে থাকবে।’
নিহত মুক্তি বর্মণ উপজেলার প্রেমনগর ছালিপুরা গ্রামের নিখিল বর্মণের মেয়ে এবং প্রেমনগর ছালিপুরা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। সে উদীচী বারহাট্টা শাখা কমিটির সাধারণ সদস্য, নারী প্রগতির ইয়ুথ গ্রুপ ও কংস থিয়েটারের সদস্য ছিলেন। তাকে কুপিয়ে হত্যা করা কাওছার মিয়া (১৮) একই গ্রামের মো. শামসু মিয়ার ছেলে। কাওছার দীর্ঘদিন ধরে মুক্তিকে উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন।
গত মঙ্গলবার বিদ্যালয় থেকে সহপাঠীদের সঙ্গে হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে মুক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করেন কাওছার। পরদিন ডিবি পুলিশ গ্রামের একটি জঙ্গল থেকে তাঁকে আটক করে। পরে মুক্তির বাবার দায়ের করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে আদালতে হাজির করা হলে বিচারকের কাছে কাওছার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
মুক্তির বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের শিক্ষক রেবেকা জালাল বলেন, ‘মুক্তিরা ছয় বোন। সবাই মেধাবী। সবার বড় বোন এবার স্নাতক পাস করেছেন, দ্বিতীয়টি গণিতে অনার্স পড়ে, তৃতীয়টি এবার আমাদের স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে, পঞ্চম বোনটি ষষ্ঠ শ্রেণিতে আর সবার ছোট বোন তৃতীয় শ্রেণিতে লেখাপাড়া করে। লেখাপাড়ার পাশাপাশি মুক্তি ভালো গান ও সেলাইয়ের কাজ জানত। এভাবে মেয়েটিকে জীবন দিতে হবে ভাবিনি। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
বারহাট্টা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোকন কুমার সাহা বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে এই খুনের মামলাটি তদন্ত কার্যক্রম করছি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন প্রাপ্তিসহ অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া সম্ভব হবে।’