যন্ত্রটি এত বড় ও ভারী যে এর নামই হয়ে যায় ‘যন্ত্রদানব’। আকৃতি আর ওজনের কারণে টানেল বোরিং মেশিনকে (টিবিএম) এই নামে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। এই দৈত্যাকৃতির টিবিএম দিয়ে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে খনন করা হয়েছে দুটি টিউব বা সুড়ঙ্গ। নির্মিত হয়েছে টানেল।
যন্ত্রটির ওজন শুনে একটু ধাক্কা খেতে পারেন। চট্টগ্রামের টানেল নির্মাণের জন্য তৈরি হওয়া টিবিএমের ওজন ২ হাজার ২০০ টন। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ওজনের প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করা হয় নীল তিমিকে, গড় ওজন ১৫০ টন। সেখানে একটি টিবিএমই সাড়ে ১৪টি নীল তিমির ওজনের সমান। মানে এই বিশাল যন্ত্রটির কাছে বিশ্বের সবচেয়ে ভারী প্রাণীও যেন কিছুই নয়।
ওজন আর আকারে যার এমন বিশালতা, দামও কিন্তু কম নয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর জন্য খরচ করতে হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। ৯৪ মিটার লম্বা এই যন্ত্র তৈরি করতে সময় লেগেছে দেড় বছর। ২০১৭ থেকে ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে চীনের চাংশু নামের (সাংহাই ও নাংজিংয়ের মাঝামাঝিতে অঞ্চলটির অবস্থান) একটি এলাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (সিসিসিসিএল) কারখানায় এই টিবিএম নির্মাণ করা হয়। যন্ত্রটি বিশাল হলেও তার বিভিন্ন অংশ আলাদাভাবে বিভক্ত।
২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের খননকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন তিনি প্রকল্পের নির্মাণক্ষেত্র বা কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড পরিদর্শন করেন। এরপর টিবিএমের মূল কাজ শুরু হয়ে যায়।
টিবিএমের সামনে থেকে হেড কাটার বা মুখের ধারালো দাঁত মাটি কাটতে কাটতে সামনে এগোতে থাকে।
প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১৬ মিটার পর্যন্ত খনন করা যেত এই যন্ত্রে। এভাবে প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার ঘনমিটার পানিমিশ্রিত মাটি খনন করা হয়েছিল টানেল নির্মাণ করতে।
টিবিএমের মাধ্যমে প্রথম টিউব বা সুড়ঙ্গের (পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারামুখী) খননকাজ শেষ হয়েছিল ২০২০ সালের ২ আগস্ট। আর দ্বিতীয় টিউব বা সুড়ঙ্গের (আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গামুখী) খননকাজ ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর শুরু হয় এবং শেষ হয় ২০২১ সালের ৭ অক্টোবর।
টানেলের প্রকল্প পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, টানেল নির্মাণে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম সুড়ঙ্গ খননের মাঝামাঝি সময়ে মাটির ধরনের কারণে খননে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। মাটি কেটে কেটে টিবিএম যেভাবে যাওয়ার কথা, সেভাবে না গিয়ে ওপরের দিকে উঠে যেতে থাকে। এ জন্য তিন থেকে চার মাস খননকাজ বন্ধ ছিল। তবে পরে চীনসহ বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে সে সমস্যা সমাধান করা হয়।
নির্মাণকাজ শেষে সেই টিবিএমের কী পরিণতি হলো, তা জানার আগ্রহ থাকতে পারে। দ্বিতীয় সুড়ঙ্গ খনন শেষে টিবিএম ধীরে ধীরে বের করে নিয়ে আসা হয়। আবার সব যন্ত্রপাতি আলাদা করা হয়। ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে টিবিএমটি আবার তার পুরোনো জায়গা চীনে ফেরত নিয়ে যাওয়া হয়।