চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় মুরাদপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বাধা দেওয়ায় এক ছাত্রীসহ দুই শিক্ষার্থীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে রক্তাক্ত করেছে ছিনতাইকারী।
ছিনতাইয়ের শিকার ওই দুই শিক্ষার্থীর নাম মোরসালিন আহমেদ ও তানজিলা বেগম। তাঁরা দুজনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। এর মধ্যে মোরসালিন থেকে আট হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে ছিনতাইকারীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও ভুক্তভোগীর সূত্রে জানা যায়, ‘দুজনেই সাড়ে ১০টায় নগরের ষোলশহর থেকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশে যাওয়ার জন্য শাটল ট্রেনে উঠেছিলেন। তাঁরা পেছনের বগিতে ছিলেন। শাটল ট্রেনে অন্য সময়ে ভিড় থাকলেও শীতকালীন বন্ধের পর আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম কর্মদিবস হওয়ায় তেমন ভিড় ছিল না। দুই শিক্ষার্থী যে বগিতে উঠেছিলেন, এতে তাঁরা ছাড়াও আরও দুজন ছিল। এই দুজনই ছিনতাইকারী। বয়স ৪০ থেকে ৪৫ বছর।
জানতে চাইলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তানজিলা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, সাড়ে ১০টায় ষোলশহর থেকে ট্রেন ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ছিনতাইকারীরা তাঁদের ওপর হামলা করে। এ সময় তিনি মুঠোফোন বের করে পরিচিতদের কল করতে চাইলে এক ছিনতাইকারী তাঁর হাতে ব্লেড দিয়ে আঘাত করে। তাঁর সহপাঠী মোরসালিনকেও মারধর করা হয়। একসময় তানজিলা আতঙ্কে চলন্ত ট্রেন থেকে লাফ দেন। এতে তিনি মাথায় আঘাত পান। পরে তিনি স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। তাঁর মাথায় ১০টি সেলাই লেগেছে।
মোরসালিনের সহপাঠী পলাশ দে প্রথম আলোকে বলেন, ছিনতাইকারীরা মোরসালিনের থেকে মুঠোফোন নিতে এলে এই নিয়ে ধস্তাধস্তি হয়। পরে ছিনতাইকারীরা তাঁকে মুখ, হাতসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্লেড দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে। একপর্যায়ে ছিনতাইকারীরা নেমে যায়। পরে ওই শাটল ট্রেনে করেই মোরসালিন ক্যাম্পাসে আসেন। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে গেলে তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে নগরে পাঠানো হয়। পলাশ বলেন, মোরসালিন এখন নগরের বেসরকারি হাসপাতালে রয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু তৈয়ব প্রথম আলোকে বলেন, ক্যাম্পাসেই মোরসালিনের রক্তপাত বন্ধ করা হয়েছিল। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছে। তবে তাঁর অভিভাবকেরা একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ প্রথম আলোকে বলেন, মোরসালিন থেকে আট হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে ছিনতাইকারীরা। তাঁকে রক্তাক্ত করা হয়েছে। এ ঘটনা তিনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। এর বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা তাঁরা নেবেন।
জানতে চেয়ে চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। পরে বিষয়বস্তু উল্লেখ করে পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি।
শাটল ট্রেনে ছিনতাইয়ের ঘটনা নতুন নয়। গত তিন বছরে অন্তত পাঁচবার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে ২০২২ সালের ১৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শহরগামী শাটল ট্রেনে এক ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়। দুই যুবক ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের এখনো চিহ্নিত করা যায়নি। ওই বছরই ছিনতাইকারীকে ধরতে চলন্ত ট্রেন থেকে লাফ দিয়েছিলেন এক ছাত্রী। তবে ধরতে পারেননি। এসবের পাশাপাশি বিভিন্ন সময় ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটে। এতে গত তিন বছরে অন্তত ১৮ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।