সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র টাঙ্গুয়ার হাওরে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জেলার তাহিরপর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওর, শহীদ সিরাজ (নিলাদ্রী) লেক, যাদুকাটা নদী ও শিমুল বাগানে পর্যটকেরা যেতে পারবেন না।
তাহিরপর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা পারভীন মঙ্গলবার বিকেলে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। এরপর সেই ঘোষণা উপজেলা প্রশাসনের ফেসবুক পেজে দেওয়া হয়েছে।
সুনামগঞ্জে মঙ্গলবার ভোররাত থেকে হু হু করে নদী ও হাওরে পানি বাড়ে। এতে জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়। জেলার ছাতক, সদর, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার উপজেলা বন্যাকবলিত বেশি। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। ছাতক উপজেলা সদরে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫৮ সেন্টিমিটার ওপরে রয়েছে।
সুনামগঞ্জে ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার সকাল ৯টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৯টা) বৃষ্টি হয়েছে ৬৭ মিলিমিটার। তবে এখানে বৃষ্টি কম হলেও সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে এ সময় ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে, ৩৯৫ মিলিমিটার। যে কারণে উজান থেকে ব্যাপক পরিমাণে পাহাড়ি ঢল নামছে।
ছাতক-সিলেট সড়ক, সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়ক, সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার, সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়ক প্লাবিত হওয়ায় এসব সড়কে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। বিকেলে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের কয়েকটি স্থান প্লাবিত হয়।
সুরমা নদীর পানি তীর উপচে জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকা দ্রুত প্লাবিত হওয়ায় মানুষ চরম আতঙ্কে আছেন। অনেকেই ২০২২ সালের ১৬ থেকে ১৯ জুনের সেই ভয়াবহ বন্যার কথা মনে করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। শহরের অনেক রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানি ঢুকেছে মানুষের ঘরবাড়িতে।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বেশির ভাগ সড়ক এখন বন্যার পানিতে প্লাবিত। কোনো কোনো সড়কে সুরমা নদীর পানির স্রোত বইছে। বন্যার পানি ঢুকেছে মানুষের ঘরবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। মানুষের বসতঘরে পানি প্রবেশ করায় বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে। আবার কেউ কেউ যাচ্ছেন আশ্রয়কেন্দ্রে।
দুপুরে শহর ঘুরে বন্যা পরিস্থিতি দেখেছেন সুনামগঞ্জ-৪ আসনের (সদর ও বিশ্বম্ভরপুর) সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাদিক ও সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী।
জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জে বন্যার পানি আরও বাড়তে পারে। এ জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ৫১২টি ভবনকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে শতাধিক পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে। জেলায় বন্যার্তদের জন্য প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী আছে। অতিরিক্ত ত্রাণসহায়তার জন্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে।