সশরীর ক্লাস শুরুর পর প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ঠাঁই হলো গণরুমে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন শিক্ষার্থীদের গণরুমে জায়গা দিয়েছে প্রশাসন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ রফিক-জব্বার হলে
ছবি: প্রথম আলো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীন শিক্ষার্থীদের গণরুমে না উঠিয়ে নবনির্মিত হলগুলো চালু করে তাঁদের সশরীর ক্লাস শুরুর কথা ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণরুম জাদুঘরে পাঠানোর ঘোষণাও দিয়েছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম। সে কারণে ভর্তি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পাঁচ মাস পর গত বছরের ৩০ নভেম্বর ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের (৫২তম ব্যাচ) ক্লাস সশরীর না করিয়ে অনলাইনে শুরু করা হয়। তবে আন্দোলনের মুখে দুই মাস পর সশরীর ক্লাস শুরু হয়েছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের যথারীতি জায়গা হয়েছে গণরুম-মিনি গণরুমেই।

গত ১৬ জানুয়ারি সশরীর ক্লাস শুরুর দাবিতে প্রথম বর্ষের ১৬টি বিভাগের শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাস বর্জন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রছাত্রীদের জন্য নবনির্মিত দুটি হলও চালু করা হয়। তবে আজ বৃহস্পতিবার তাঁদের সশরীর ক্লাস শুরু করা হলেও নতুন হলে তাঁদের বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। অছাত্ররা হলে অবস্থান করা, দেড় শতাধিক কক্ষ ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের দখলে থাকা এবং হলের আসন বণ্টনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ না থাকায় নবীন শিক্ষার্থীদের গণরুমে থাকতে হচ্ছে বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন।

আরও পড়ুন

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ২৩ জানুয়ারি নবনির্মিত শহীদ তাজউদ্দীন হল ও রোকেয়া হল চালু করা হলেও সেখানে নবীন শিক্ষার্থীদের আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। সেখানে আবেদনের ভিত্তিতে পুরোনো হলের শিক্ষার্থীদের আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর পুরোনো হলের ফাঁকা আসনগুলোতে গণরুম ও মিনি গণরুমে থাকা ৫০ ও ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা উঠেছেন।

বৃহস্পতিবার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ রফিক-জব্বার হল, আল-বেরুনী হল, শেখ হাসিনা হল, জাহানারা ইমাম হল ও বেগম সুফিয়া কামাল হলের নবীন শিক্ষার্থীরা গণরুমে গাদাগাদি করে থাকছেন। সেখানে একটি বড় কক্ষে প্রথম বর্ষের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী থাকছেন। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, মওলানা ভাসানী হল, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল, শেখ রাসেল হল, শহীদ সালাম-বরকত হল, ফজিলাতুন্নেসা হল, প্রীতিলতা হল, নওয়াব ফয়জুন্নেসা হল, বেগম খালেদা জিয়া হল, মীর মশাররফ হোসেন হল, আ ফ ম কামালউদ্দিন হল ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা হলের নবীন শিক্ষার্থীদের মিনি গণরুমে রাখা হয়েছে। সেখানে তাঁরা চারজনের রুমে আট থেকে ১৪ জন থাকছেন।

আরও পড়ুন
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
ছবি: প্রথম আলো

বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৪৭তম ব্যাচ থেকে ৫২তম ব্যাচ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চলমান। ফলে এই ছয় ব্যাচের শিক্ষার্থীরাই কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ শিক্ষার্থী। তবে হলগুলোতে ৪১তম ব্যাচ থেকে ৪৬তম ব্যাচের বহু শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন। যাঁদের বেশির ভাগই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। খোদ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুটি করে চার আসনবিশিষ্ট মোট চারটি কক্ষ দখলে রেখেছেন। এর মধ্যে মওলানা ভাসানী হলের ৩২০ ও ৩২২ নম্বর কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৩৪৯ ও ৪৪৭ নম্বর কক্ষে সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান লিটন থাকছেন। লিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পোষ্য কোটায় ভর্তি হওয়া ছাত্র। নিয়ম অনুযায়ী পোষ্য কোটার কেউ হলে থাকতে না পারলেও তিনি একাই দুই কক্ষ দখল করে থাকছেন।

দীর্ঘ সাত মাস পর সশরীর ক্লাস শুরু করে আসন দিতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নবীন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৫২তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের অনলাইনে দীর্ঘদিন বসিয়ে রেখেছিল, কথা ছিল হলে তুলে একটি করে নির্দিষ্ট আসন দেবে। কিন্তু হলে এসে দেখি, একটি ছোট চার আসনের কক্ষে আটজন করে থাকতে হচ্ছে। এই রুমে কোনো খাট নেই, চেয়ার-টেবিল কিছু নেই। ফ্লোরে তোশক বিছিয়ে আমরা থাকছি। ফ্লোর থেকে ঠান্ডা ওঠে খুবই। অতি দ্রুত আসন দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

আরও পড়ুন

এদিকে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের গণরুমে ওঠানোর প্রতিবাদে ও হলগুলোতে নবীনদের আসন নিশ্চিতের দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এ সময় ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের (একাংশ) আহ্বায়ক আলিফ মাহমুদ বলেন, ‘গণরুম প্রথা জিইয়ে রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়ী। নতুন হল চালু করার পরও আসনসংকট। অছাত্রদের হল থেকে বের না করার কারণেই কৃত্রিম আসনসংকট দেখা দিয়েছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক নিগার সুলতানা বলেন, ‘আমাদের কাছে এখনো নবনির্মিত নতুন দুটি হল আছে। পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় আমরা হল দুটি চালু করতে পারিনি। আশা করি, দেড় মাসের মধ্যে নতুন হল খুলে দেওয়া হবে। তাহলে গণরুম ও মিনি গণরুম থাকবে না।’

এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে তাঁর বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। তাঁর ব্যক্তিগত মুঠোফোন নম্বরে ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি।

আরও পড়ুন