চুয়াডাঙ্গায় আ.লীগের সম্মেলনে পাল্টাপাল্টি হামলা, চেয়ার–ছোড়াছুড়ি

সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রোববার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সরোজগঞ্জ তেঁতুল শেখ কলেজ মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, চেয়ার–ছোড়াছুড়ি ও স্লোগান দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

আজ রোববার দুপুরে জেলা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে সরোজগঞ্জ তেঁতুল শেখ কলেজ মাঠে সম্মেলনস্থলে এ ঘটনা ঘটে। উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যেই সন্ধ্যায় সদর উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের নবগঠিত কমিটি ঘোষণা করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় নেতা-কর্মী সূত্রে জানা যায়, বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলী আজগারসহ কেন্দ্রীয় নেতারা সম্মেলনস্থলে আসেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক নঈম হাসান জোয়ারদার, যুগ্ম আহ্বায়ক জিল্লুর রহমানসহ একদল তরুণ কার্ড ঝুলিয়ে সম্মেলনস্থলে ঢুকতে যান। এ সময় কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আলী আহাম্মেদ হাসানুজ্জামান ও তাঁর অনুসারীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে তাঁদের ধাওয়া করেন। পরে অতিথিরা মূল মঞ্চে উঠলে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সম্মেলন শুরু হয়। জাতীয় সংগীত শেষ হতে না হতেই হামলার শিকার হন তরুণেরা। পরে তরুণেরা লাঠিসোঁটা নিয়ে পাল্টা–আক্রমণ করলে সম্মেলনের মূল মঞ্চের পাশে চরম উত্তেজনা দেখা যায়। পুলিশ বাঁশি বাজিয়ে উভয় পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। এরপর কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় জ্যেষ্ঠ নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

দুপুর ১২টায় আবার শুরু হয় সম্মেলন। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মান্নান ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জহুরুল ইসলাম জোয়ারদারের যৌথ সভাপতিত্বে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ারদার সম্মেলন উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘দয়া করে দলের ভেতরে কেউ বিভেদ সৃষ্টি করতে আসবেন না। এখন সময় ঐক্যবদ্ধ রাজনীতির। ঐক্যবদ্ধ থাকলে যেকোনো অপশক্তিকে মোকাবিলা করতে আমরা সক্ষম হব।’

সম্মেলনের কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছিল। এর মধ্যে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শাহাদত হোসেন, পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এরপর কুতুবপুর ইউপির চেয়ারম্যান আলী আহাম্মেদ হাসানুজ্জামান শুভেচ্ছা বক্তব্য শুরু করেন। বক্তৃতায় যুবলীগের আহ্বায়ক নঈম হাসান ও তাঁর অনুসারীদের উদ্দেশে আলী আহাম্মেদ হাসানুজ্জামান বলেন, ‘আমি যদি হুকুম দিই, তাহলে একজনও সুস্থভাবে ফিরে যেতে পারবেন না।’

এমন বক্তব্যে নঈম হাসান ও তাঁরা অনুসারীরা ক্ষুব্ধ হন। তাঁরা আলী আহাম্মেদ হাসানুজ্জামানের দিকে তেড়ে যান এবং চেয়ার ছোড়াছুড়ি করেন। সম্মেলনস্থলে উপস্থিত দলীয় নেতা-কর্মীরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক আনুষ্ঠানিকভাবে কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন। সেই সঙ্গে হাত তুলে ধরে তাঁদের পরিচয় করিয়ে দেন তিনি।

নবগঠিত কমিটির চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে শংকরচন্দ্র ইউপির চেয়ারম্যান আবদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কুতুবপুর ইউপির চেয়ারম্যান আলী আহাম্মেদ হাসানুজ্জামানের নাম ঘোষণা করা হয়। আর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছেন মোহাম্মদ আলাউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. আবদুল কাদের।

কমিটি ঘোষণার পরে মঞ্চ ঘিরে আবারও উত্তেজনা দেখা যায়। এ সময় জেলা ও গোয়েন্দা পুলিশ কলেজের গেট বন্ধ করে কঠোর অবস্থান নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম বলেন, ‘হিংসা–বিভেদ ভুলে ঐক্যের রাজনীতি আমাদের লক্ষ্য।’ বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া সরকার বলেন, ‘ভাই লীগ, দাদা লীগ ও দিদি লীগের দিন এখন শেষ। নিজেদের মধ্যে লাঠালাঠি করবেন না। লাঠি রাখবেন, সামনে জামায়াত-বিএনপিকে মোকাবিলায়।’

সম্মেলনে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য আমিরুল ইসলাম, হোসনে আরা লুৎফা, চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলী আজগার প্রমুখ।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সকাল থেকে সম্মেলনস্থলে ছিলেন সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামান লালন। দুপুরের পর সেখানে যোগ দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আবু তারেক।

আনিসুজ্জামান লালন বলেন, সম্মেলনস্থলে কয়েক দফা পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটলেও পুলিশের সরব উপস্থিতির কারণে রক্তারক্তি হয়নি।