আমাদের যেন দেশ থেকে পালিয়ে যেতে না হয়: বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘আমাদের এই দেশে সরকারপ্রধান নিহত হয়েছেন, সরকারপ্রধান জেলে গেছেন। কিন্তু পালিয়ে গেছেন, এটাই প্রথম হলো। এর চেয়ে লজ্জার আর কিছু আছে! যেন আমাদের কোনো দিন এমন দুর্ভাগ্যের শিকার না হতে হয়। এ দেশ থেকে যেন পালিয়ে যেতে না হয়। আমরা সেভাবে রাজনীতি করব এবং জনগণের সমর্থন পেলে দায়িত্ব পালন করব।’
রোববার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটির শীর্ষ তিন নেতার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নজরুল ইসলাম এসব কথা বলেন। মুক্তাগাছা উপজেলা ও পৌর বিএনপি স্থানীয় নন্দীবাড়ী স্টেডিয়াম মাঠে ‘ত্রিরত্ন সংবর্ধনা’ শিরোনামে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ওই তিনজন হলেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর মাহমুদ আলম ও সদস্যসচিব রোকনুজ্জামান সরকার।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, এই দেশে সবাই রাজনীতি করতে পারবেন, সবাই মত প্রকাশ করতে পারবেন, কিন্তু দেশের মালিক হলো জনগণ। এই জনগণ যাকে সমর্থন করবে, তারাই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের কথা উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এই সরকারে যাঁরা ক্ষমতায় আছেন, তাঁরা তো কেউ জোর করে ক্ষমতা দখল করেননি। তাঁদের তো আমরাই ক্ষমতায় বসিয়েছি। আমরাই তাঁদের প্রতি সমর্থন দিয়েছি। তাঁদের অনুরোধ করে দায়িত্ব নিতে বলেছি, তাঁরা দায়িত্ব নিয়েছেন। সহযোগিতা করব বলেছি, সহযোগিতা করে যাচ্ছি। তবে আমরা খুব খুশি হতাম যদি, তাঁরা আর একটু সক্রিয় হতেন। যদি জিনিসপত্রের দামটা তাঁরা আরেকটু নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যদি আরেকটু উন্নত হতো, তাহলে আরও খুশি হতাম।’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, একটা স্বৈরাচারী শাসক, একটি ফ্যাসিবাদী শাসক, তারা চলে গেছে। কিন্তু তাদের স্বৈরাচারী লোকজন এখনো বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মধ্যে আছে। তারা নানাভাবে বিঘ্ন সৃষ্টির চেষ্টা করছে। যদি সবাই সচেতন না থাকে, তাহলে তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করবে। আর তারা যদি বিশৃঙ্খলা করতে পারে, তাহলে এই যে হাজার হাজার নেতা-কর্মী, হাজার হাজার ভাই-বোন, শিশু জীবন দিল, সেটা ব্যর্থ হয়ে যাবে। সেটা যাতে না হয়, সে জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, বাংলাদেশের অনেক রাজনৈতিক দল আছে, প্রত্যেক দলেরই আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে। আওয়ামী লীগ স্বাধীন দেশে সব রাজনৈতিক দল বাতিল করে বাকশাল করেছিল। সেটা ছিল জবরদস্তি। কিন্তু বিএনপি সেটায় বিশ্বাস করে না বলেই সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন।
সংস্কারের বিষয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, মেরামত কেন প্রয়োজন? কারণ, বিগত সরকার দেশের সব ব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলেছে। ফ্যাসিস্ট সরকার বাংলাদেশের ‘দুইটা কিডনিই’ ধ্বংস করে ফেলেছে। তার একটা হলো ব্যাংকিং খাত, আরেকটা হলো বিদ্যুৎ খাত। আওয়ামী লীগ সরকার নিজের স্বার্থে, ক্ষমতায় টিকে থাকার স্বার্থে, লুটপাটের স্বার্থে সব ধ্বংস করেছে। তারেক রহমানের নামে যে মিথ্যা মামলাগুলো আছে, আদালতের মাধ্যমে সেই মামলাগুলোর ফয়সালা হলে তখন তিনি দেশে ফিরবেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন তিনি।
মুক্তাগাছা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এ কে এম জাহাঙ্গীর হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক জাকির হোসেন, সদস্যসচিব রোকনুজ্জামান সরকার প্রমুখ।