বীরগঞ্জে ভোটের মাঠে পাঁচ প্রার্থীই সরব, হিসাব-নিকাশ ‘খুব জটিল’
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে তিন আওয়ামী লীগ নেতা প্রার্থী হয়েছেন। তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছেন বিএনপির এক নেতা (সদ্য বহিষ্কৃত)। পাশাপাশি এক স্বতন্ত্র প্রার্থীও রয়েছেন। ওই স্বতন্ত্র প্রার্থীর ভাই জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় ভোটাররা তাঁকে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবেই দেখছেন। পাঁচ প্রার্থীই ভোটের মাঠে সবর।
বীরগঞ্জ উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য আমিনুল ইসলাম (ঘোড়া), জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবু হুসাইন ওরফে বিপু (আনারস), উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ওয়াহেদুজ্জামান বাদশা (টেলিফোন), জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা রেজওয়ানুল হক (কাপ–পিরিচ) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কে এম কুতুবউদ্দিন (দোয়াত–কলম)।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ২১ মে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ, কাহারোল, বিরল, বোচাগঞ্জসহ মোট চারটি উপজেলায় ভোট গ্রহণ হবে। ২ মে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই ব্যানার, ফেস্টুন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, পথসভা, উঠান বৈঠকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। হাটবাজারে, চায়ের দোকানে, রাস্তার মোড়ে মোড়ে চলছে নির্বাচনী আলোচনাসহ পছন্দের প্রার্থীর ভোটপ্রাপ্তির বিষয়ে নানা সমীকরণ।
গত শনিবার বীরগঞ্জ উপজেলার সুজালপুর, প্রেমবাজার, কল্যাণীহাট, হাবলুরহাট এলাকা ঘুরে ভোটারদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
সুজালপুর পৌর এলাকার বাসিন্দা রশিদুল ইসলাম (৫০) বলেন, ‘মানুষ পরিবর্তন চায়। নতুন ও তরুণ-যুবক ভোটাররাও ঝুঁকছে আনারসের দিকে। তা ছাড়া তাঁর বাবাও (আবু হুসাইন) সুজালপুর ইউপির চেয়ারম্যান ছিলেন। এবার সংসদ সদস্য নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন তিনি। সেদিক বিবেচনায় মাঠ কিছুটা গোছানোই আছে তাঁর। আবার বর্তমান চেয়ারম্যানের পক্ষে মাঠে কাজ করছেন সাবেক সংসদ সদস্য। এ ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুর ভোটটা হয়তো ঘোড়া প্রতীকে একটু বেশিই পড়বে।’
এদিকে গতবার উপজেলা নির্বাচনে হেরেছিলেন বিএনপি নেতা রেজওয়ানুল হক। এবারও প্রার্থী হয়েছেন। দল থেকে তাঁকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। কিন্তু মাঠে দেখা যাচ্ছে বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও ভোটে নেমেছেন। সেদিক থেকে তিনি সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন। অন্যদিকে দোয়াত-কলম প্রতীকের প্রার্থী কে এম কুতুবউদ্দিন ২০১৪ সালের নির্বাচনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছিলেন। তিনিও এবার সমানতালে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘কোন দিকে যাব, কার ভোট করব। নিজের দলেই তিন প্রার্থী। এর মধ্যে দুজন তো বেশ শক্তিশালী। বিএনপির প্রার্থীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে কর্মী-সমর্থকেরা যদি ভোট দিতে আসেন বা কোনো হুমকির মুখে না পড়েন, তাহলে ফলাফলটা অন্য রকম হতে পারে।’
হাবলুরহাট এলাকায় নাজমুল হোসেন নামের একজন বলেন, ‘কায় জিতিলো, কায় হারিলো তাতে হামার কী? ভোটের দিন মন চাহিলে ভোট দিবার যামো, মন না চাহিলে যাম নাই। একজনের তানে চিল্লাইয়া আরেকজনের শত্রু হবার দরকারটা কী। দুই দিন চিল্লাইবেন, কয়ডা টাকা পাইবেন? ভোট শেষ হইলে কাহো পুছিবে নাই।’
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এবারের ভোটের হিসাব-নিকাশ খুব জটিল। দোয়াত-কলম আর কাপ–পিরিচ প্রতীক ভালোই এগিয়ে আছে; যদিও তাঁদের মধ্যে ভোট ভাগাভাগি হবে। মাঝখানে তুমুল লড়াই হবে ঘোড়া ও আনারস প্রতীকের। ঘোড়ার প্রতীকের প্রচারণায় মাঠে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল। অন্যদিকে বর্তমান সংসদের মৌন সম্মতি আছে আনারসের প্রতি। এখন এই কয়েক দিনে যে বেশি দৌড়াতে পারবে, জয় তারই হবে। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা তিন প্রার্থীর দিকে ভাগাভাগি হয়েছেন।’
ভোটে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশা প্রকাশ করছেন পাঁচ প্রার্থীই। মুঠোফোনে দোয়াত–কলম প্রতীকের প্রার্থী কে এম কুতুবউদ্দিন বলেন, ‘একটি ইউনিয়ন পরিষদে টানা তিনবার চেয়ারম্যান ছিলাম। আমার ওপরে মানুষের ভরসা আছে। এটা শেষ পর্যন্ত থাকবে। ভোটাররা ছেড়ে যাবে না আমাকে।’
তারুণ্যের শক্তিকে পুঁজি করে ভোটের মাঠে থাকা আনারস প্রতীকের প্রার্থী আবু হুসাইন বলেন, ছাত্র থাকা অবস্থাতেই এলাকার মানুষের সঙ্গে আছি। ভোট আসছে বলেই ভোটারদের কাছে যাচ্ছি—বিষয়টি এমন নয়। উপজেলার সব স্তরের মানুষের সঙ্গে আমার নিবিড় যোগাযোগ। নতুন সংসদ সদস্যের মতো নতুন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বানাবেন—ভোটারদের প্রতি এ বিশ্বাস আমার আছে।’
জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী বর্তমান চেয়ারম্যান ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সংসদ সদস্য ছিলাম, তিনবারের চেয়ারম্যান আমি। ভোটাররা বরাবরই আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। ভোটে আমার পৃথক কোনো কর্মী নেই। প্রত্যেক ভোটার আমার একেকজন কর্মী।’
কাপ-পিরিচ প্রতীকে অংশ নেওয়া বিএনপি নেতা রেজওয়ানুল হক বলেন, ‘দীর্ঘ সময় রাজনীতি করে আসছি। গত ১৫ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকলেও বিএনপি শক্তিশালী একটি দল। এই উপজেলায় বিএনপি অনেক সুসংগঠিত। জয়ের লক্ষ্য দলের সবাইকে নিয়ে মাঠে কাজ করছি।’
আর টেলিফোন প্রতীকের প্রার্থী ওয়াহেদুজ্জামান বাদশা বলেন, ‘মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি। দোয়া প্রার্থনা করছি। ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী আমি।’