নাটোর জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণার এক দিন পর পাঁচ নেতা বাদ, বিক্ষোভ
নাটোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার এক দিনের মাথায় পদ পাওয়া পাঁচজনকে বাদ দেওয়ার ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে জেলার রাজনীতি। বাদ পড়া নেতারা জেলা বিএনপির রাজনীতিতে প্রভাবশালী হিসেবে বিবেচিত। তাঁদের সমর্থকেরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন শহরে।
দলীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই নেতাদের বেশ কয়েকজন অঙ্গসংগঠনের পদে রয়েছেন। ‘এক নেতা এক পদ’ নীতির কারণে জেলা বিএনপির কমিটিতেও পদ পাওয়ার বিষয়টি কেন্দ্রের নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে।
জেলা বিএনপি সূত্রে জানা যায়, ২৪ মার্চ বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ৩৬ সদস্যবিশিষ্ট নাটোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি অনুমোদনের এক দিন পর রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত আরেকটি চিঠিতে সদস্য পদ পাওয়া পাঁচজনকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়। বাদ পড়া নেতারা হলেন এ হাই তালুকদার, রাসেল আহম্মেদ, ফয়সাল আলম, শামসুল আলম ও সানোয়ার হোসেন। তাঁদের স্থানে কমিটিতে আইনুন নাহার, আবদুল কাদের মিয়া, শাজাহান আলী, আশরাফ আলী ও নাসীম খানকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সেই সঙ্গে একজন অতিরিক্ত সদস্য শহিদুল ইসলামকেও (ভিপি লিটন) অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় সংশোধিত এই আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বাদ পড়া নেতারা ও তাঁদের অনুসারীরা জেলার অন্তত ৯টি স্থানে বিক্ষোভ করেন। নাটোর শহরের হরিশপুর ও বড়াইগ্রামের বাইপাস মোড়ে নাটোর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন তাঁরা। এরই ধারাবাহিকতায় আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নাটোর শহরের তেবাড়িয়া এলাকায় বাদ পড়া ফয়সাল আলমের নেতৃত্বে বিএনপির কয়েক শ নেতা-কর্মী বিক্ষোভ মিছিল করেন।
বিক্ষোভ শেষে ফয়সাল আলমের তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘বিগত আন্দোলন–সংগ্রামের প্রতিটি পর্যায়ে আমি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছি। অসংখ্যবার মিথ্যা মামলায় কারাগারে গেছি। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বহুবার আমাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে, হত্যার চেষ্টা করেছে। অথচ জেলা কমিটি থেকে আমার নাম বাদ দিয়ে আমাকে অপদস্থ করা হয়েছে।’
বেলা তিনটায় বড়াইগ্রামের রাজাপুর বাজার এলাকায় নাটোর-পাবনা মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন বাদ পড়া নেতা শামসুল আলমের অনুসারীরা। শামসুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেলা কমিটি থেকে নাম বাদ পড়ায় আমি ঢাকায় এসে যুগ্ম মহাসচিবের সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি বলেছেন, জেলার কিছু নেতা নাকি আমার নামে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগের কথা বলেননি। নানা কারণে অভিযোগ করা হতেই পারে। কিন্তু তা প্রমাণ না করে বা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কমিটি থেকে বাদ দেওয়াটা অনুচিত হয়েছে বলে আমি মনে করি। আমার বিরুদ্ধে যদি চাঁদাবাজির অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে আমি নিজে থেকেই রাজনীতি ছেড়ে দেব। কিন্তু অন্যায়ভাবে দোষারোপ করা হলে তা মেনে নেব না।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহিম নেওয়াজ আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে সদস্যসচিবসহ আমাকে ডাকা হয়েছিল। আমরা যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, বাদ পড়া এ হাই তালুকদার জেলা যুবদলের সভাপতি, সানোয়ার হোসেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক, শামসুল আলম বড়াইগ্রাম উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ফয়সাল আলম সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন। কারও বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে। এ কারণে তাঁদের বাদ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের শূন্য পদে নতুনদের যুক্ত করা হয়েছে।’
কমিটি থেকে বাদ পড়া নাটোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাসেল আহমেদ (রনি) চাঁদাবাজির অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, ‘এটা কাল্পনিক অভিযোগ। আমরা তো এত দিন পালায় বেড়াইছি। এখন মানুষের সঙ্গে ওঠাবসা করছি। এটাকে অনেকে চাঁদাবাজি মনে করছে।’
রাসেল আহমেদ আরও বলেন, ‘আমাদের বাদ দেওয়ার ঘটনাটা জেলার অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ফসল। বর্তমানে যাঁরা নেতৃত্বে আছেন, তাঁরা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে হেনস্তা করতেই এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন। কারণ, আমরা তাঁর সবচেয়ে বলিষ্ঠ কর্মী। আমার বিরুদ্ধে ৩০টা মামলা। শত নির্যাতন সহ্য করে আমরা বিগত দিনে রাজপথে থেকে আন্দোলন–সংগ্রাম করেছি। আমাদের আর পরীক্ষা দেওয়ার কিছু নাই।’
অপর দিকে, নাটোর জেলা যুবদলের সভাপতি এ হাই তালুকদার (ডালিম) বলেন, ‘আমি অঙ্গসংগঠনের নেতা হলে জেলা বিএনপির নেতা হতে পারব না, এমন তো কোনো বিধান নেই। আসলে আমি রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর পরিবারের সন্তান। আমাদেরকে রাজনৈতিকভাবে ছোট করার জন্য তথা নাটোর বিএনপিকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে বাদ দেওয়ার নাটক করা হয়েছে।’
নাটোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি ছাত্ররাজনীতি থেকে এখানে এসেছি। এনএস সরকারি কলেজের ভিপি ছিলাম। দলের প্রয়োজনে যখন যা প্রয়োজন, তাই করেছি। এর জন্য শুধু জীবন দিতে বাকি আছে। তবুও এই প্রতিদান পেলাম। খুবই কষ্ট হয়।’