‘অসুস্থ শরীর আর এক পা নিয়াই খাইট্টা খাই, তা-ও ভিক্ষা করি না’

ইটের খোয়া তৈরির কাজ করছেন বিল্লাল হোসেন। শনিবার সকালে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরের দক্ষিণ কলাদী এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

দিনমজুর বিল্লাল হোসেন (৪২)। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে দুই দশকের বেশি সময় ধরে জীবন-জীবিকার লড়াই অব্যাহত রেখেছেন। যত কষ্টই হোক, পরিশ্রম করেই জীবন চালাতে চান তিনি।

বিল্লাল হোসেন চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার চৌরাঙ্গা গ্রামের মৃত আবদুল জলিলের ছেলে। সাত ভাইবোনের মধ্যে তিনি মেজ। বিল্লাল ২০০৮ সাল থেকে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় ইটের খোয়া তৈরির শ্রমিক (দিনমজুর) হিসেবে কাজ করছেন। উপজেলার নবকলস এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় পরিবারের সঙ্গে বসবাস করেন তিনি।

উপজেলা সদরের দক্ষিণ কলাদী এলাকায় কয়েক দিন ধরে তাজুল ইসলাম চৌধুরী নামের এক ব্যক্তির দালান নির্মাণের সুরকি (খোয়া) তৈরির কাজ করছেন বিল্লাল। শনিবার সকালে সেখানে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। আলাপচারিতায় উঠে আসে তাঁর জীবনের নানা দুঃখ-কষ্ট ও পা হারানোর যন্ত্রণার কথা।

ক্রাচে ভর করে হাঁটেন জীবনসংগ্রামী বিল্লাল। শনিবার সকালে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরের দক্ষিণ কলাদী এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘২০০২ সালে দুর্ঘটনায় আমার ডান পা ভাইঙ্গা যায়। পরে ডাক্তার সেই পা কাইটা ফেলে। ২২ বছর ধইরা একটা পা নিয়াই দিনমজুর হিসেবে ইটের খোয়া তৈরির কাম করতাছি। যা পাই, তা দিয়াই চলে সংসার। ক্রাচে ভর কইরা বিভিন্ন জায়গায় গিয়া বিভিন্ন মালিকের কাম করি। প্রতিদিন রুজি অয় ৪০০ থেকে ৫০০ টেয়া। প্রায়ই শরীর অসুস্থ থাহে। অসুস্থ শরীর আর এক পা নিয়াই খাইট্টা খাই, তা–ও ভিক্ষা করি না। কারও কাছে হাত পাততে ভালা লাগে না।’

দক্ষিণ কলাদী এলাকার বাসিন্দা তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বিল্লাল তাঁর দালান নির্মাণের জন্য সুরকি তৈরির কাজ করছেন। তাঁকে প্রতিদিন খুব কাছ থেকে দেখছেন। তিনি খুব লড়াকু মানসিকতার। ক্রাচে ভর করে প্রতিদিন তাঁর বাড়িতে এসে কাজ করছেন। সকাল-সন্ধ্যা কাজ করেও তাঁর চোখে-মুখে ক্লান্তির ছাপ নেই। বেঁচে থাকার তাঁর এই লড়াই প্রশংসনীয়।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাতিমা সুলতানা বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে এক পায়ে ভর করে ওই ব্যক্তি যেভাবে জীবন ও জীবিকার জন্য লড়াই করছেন, তা অদম্য মানসিকতা ও সাহসিকতার পরিচায়ক, যা অন্যদের জন্য অনুকরণীয় ও প্রেরণাদায়ক।

জীবনসংগ্রামী বিল্লাল বলেন, ‘যত সমস্যা আর বিপদ থাকুক, বাঁচনের লড়াই চালাইয়া যামু। অনেকেই কয় ভিক্ষা করতে। কিন্তু আমি ভিক্ষা করুম না। দরকার অইলে না খাইয়া মরুম, তবু কারও কাছে হাত পাতুম না। এক পা লইয়াই খাইটা খামু। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।’