‘গাছ কাটার আগে আমাদের কাটো’
‘উন্নয়নের করাত থেকে গাছেদের মুক্তি দাও’, ‘বেঁচে থাকা গাছ আপনার কী ক্ষতি করে’, ‘গাছ কাটার আগে আমাদের কাটো’—প্ল্যাকার্ডে এমন নানা স্লোগান লিখে পরিবেশকর্মীরা জড়ো হয়েছিলেন টাইগারপাসের দ্বিতল সড়ক হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী সড়কের বড় একটি ছায়াবৃক্ষের নিচে। বিশাল শিরীষগাছটিতে ইতিমধ্যে নম্বর দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্পের প্রয়োজনে গাছটি যে কাটা হবে, তারই চিহ্ন বহন করছে এটি। ওই মহিরুহ এই সড়কের ৪৬টি গাছ কাটার পরিকল্পনা নিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। আর এমন পরিকল্পনার কথা জানাজানি হওয়ার পর গতকাল রোববার রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নাগরিকেরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেন। আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার এই বিক্ষোভও তার জের ধরেই।
‘সম্মিলিত পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের’ ব্যানারে আয়োজিত এই বিক্ষোভ সমাবেশে সামাজিক, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষজন যেমন এসেছেন, তেমনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন পেশাজীবীরাও। বেলা দেড়টা পর্যন্ত শতবর্ষী শিরীষগাছের চারপাশে অবস্থান নিয়ে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন তাঁরা। কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দার খান গাছ কাটার বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘যাঁরা এসব সিদ্ধান্ত নেন, তাঁরা বিভিন্ন স্বার্থে কাজ করেন। আমরা বলছি আত্মঘাতী। সবার যদি এই আত্মঘাতী মনে মতো, তাহলে এ কাজটা করতে পারতাম না। আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এমন সব লোককে ওপরে বসান, যাঁদের কোনো ট্রেনিং নেই। এই গাছগুলো থেকে নানা রকম সুবিধা পেয়ে থাকি এটা নিয়ে তাঁরা অবহিত নন। প্রকৃতি থেকে যে আমরা নানা সুবিধা পাই, এসব নিয়ে তাঁদের জানাশোনা, জ্ঞান নেই। এসব জায়গায় যাঁরা বসেন, তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত।’
সিডিএ চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করছে।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ১৪ নভেম্বর ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করেন। মূল অংশের নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ শেষ না হওয়ায় যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়নি। এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা।
মূল এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি ওঠা-নামার জন্য ১৫টি র্যাম্প রয়েছে। এর মধ্যে দুটি আছে নগরের টাইগারপাসে। দুটি র্যাম্পের মধ্যে টাইগারপাস থেকে পলোগ্রাউন্ড পর্যন্ত মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী সড়কে গাড়ি ওঠার র্যাম্প নির্মাণ করা হবে। সবুজে ঘেরা অনন্য এই সড়কের একটি অংশ গেছে পাহাড় ঘেঁষে।
আরেকটি অংশ নিচে। মধ্যবর্তী পাহাড়ি ঢালে রয়েছে ছোট-বড় শতাধিক বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। এসব গাছে রয়েছে নানা প্রজাতির পাখির বাসা। এখন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প (গাড়ি ওঠার পথ) নির্মাণ করতে গাছগুলো কাটতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ইতিমধ্যে গাছগুলোতে লাল ও সাদা কালি দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে।
র্যাম্প নির্মাণের জন্য গাছ কাটার উদ্যোগের বিরোধিতা করেছেন নগর-পরিকল্পনাবিদ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তাঁরা বলছেন, যেসব গাছ কাটা যাবে, তার মধ্যে শতবর্ষী গাছ আছে। গাছগুলো রক্ষায় এই অংশে র্যাম্প নির্মাণের দরকার নেই। গাছ কেটে র্যাম্প নির্মাণ করা হলে সড়কের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা পরিবেশের গুরুত্ব বিবেচনা করে অন্য কোথাও র্যাম্প নির্মাণের অনুরোধ জানালে তা রাখেনি সিডিএ। অবশ্য প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিডিএ বলছে, এই র্যাম্প নির্মাণ করতে হলে গাছ কাটতে হবে।
এর আগে নগরের মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত আখতারুজ্জামান চৌধুরী উড়ালসড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে সড়কদ্বীপে থাকা অনেক গাছ কেটেছিল সিডিএ।