ইশতেহার ঘোষণা করে মাহি বললেন, নৌকা থেকে টাকা পেলেও ট্রাক মার্কায় ভোটটা দেবেন
রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহিয়া মাহি (শারমিন আক্তার নিপা) তাঁর নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। এ উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় তানোরের মুন্ডুমালা পৌর শহরের নিজ নির্বাচনী ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। এ সময় তিনি নৌকার প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী ও তাঁর কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে হুমকি ও প্রচারণায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেন।
ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী মাহি বলেন, ‘৫ জানুয়ারির পর থেকে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, জমিদারের অনেক টাকা। জমিদার সাহেবের (নৌকার প্রার্থী) যত টাকা, আমাদের সবার মিলে হয়তো এত টাকা হবে না। এগুলো তো আসলে বিভিন্ন উপায়ে অর্জন করা টাকা। এখন জেতার জন্য এই টাকা দিয়ে জনগণকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছে। জনগণকে আমি বলে দিয়েছি, আপনারা টাকা পেলে টাকাটা নেবেন। টাকাটা নিয়ে ট্রাক মার্কাতে ভোটটা দেবেন।’
মাহি গত ১৮ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রতীক পাওয়ার পর থেকে প্রচারণায় বক্তব্যে টানা তিনবারের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীকে কখনো ‘জমিদার সাহেব’, কখনো ‘চৌধুরী সাহেব’ সম্বোধন করে বক্তব্য দিয়ে আসছেন। এই আসনে এই দুই প্রার্থী ছাড়া আরও ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
মাহি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ভোটকেন্দ্রে সবাইকে নিয়ে আসা। আমার নিজের এক আত্মীয়, ওনাকে স্থানীয় ইউপি সদস্য বলেছেন, তোমাদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার দরকার নেই। জনগণ বলেন, উনি নাকি অনেক ঝামেলা করতে পারেন। এলাকাগুলো থেকে অনেক সংবাদ পাচ্ছি, তাঁরা ভোটারদের ভেতর একটা ভীতি সঞ্চার করতে চাচ্ছেন। তাঁরা বলে দিচ্ছেন, তোমাদের ভোট দিতে যাওয়া লাগবে না। মানে তাঁদের নেতা-কর্মীরা শুধু ভোট দিলেই হবে। জনগণ যাতে ভোট দিতে না যেতে পারেন, এ জন্য একটা প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর চেষ্টা করছে। আমি যেহেতু মাঠে নেমেছি, হয় জিতব নাহয় হারব, মাঠ থেকে ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই।’
মাহি বলেন, ‘আপনারা রাজশাহী থেকে আসার সময় আগে দেখবেন, তানোর থেকে মুন্ডুমালা আসার পথে আমার প্রচুর ফেস্টুন ছিল। এখন দেখবেন, সব ফেস্টুন খুলে জমিদার সাহেবের ফেস্টুন ওখানে লাগানো হয়েছে। বিপুল পরিমাণে পোস্টার, ফেস্টুন তাঁরা খুলে ফেলেছেন। সরনজাই ইউনিয়নে মুন্ডুমালা থেকে মাইক ভাড়া করেছেন, তার আধা ঘণ্টা পর মাইকওয়ালা বলেন যে “আমাকে মেরে ফেলবে যদি আমি মাইকিং করি।” এই রকম বহু ঘটনা আছে।’
মাহি আরও অভিযোগ করেন, ‘কেন্দ্রে কেন্দ্রে পোস্টারিং চলছে। সেখানে পোস্টারিং করতে গিয়ে স্থানীয় কিছু ছেলেপেলে, তারা মাদকাসক্ত অবস্থায় থাকে, ছুরি দেখিয়ে তারা বলে, এই জায়গায় পোস্টার লাগালে খবর আছে। যেহেতু আমি ভয় পাই না, আমার ছেলেপেলের ভয় পাওয়ার প্রশ্নই আসে না। সমস্যাটা হয়েছে, আমি জনগণের সঙ্গে বেশি বেশি যুক্ত হব, নাকি এই দিকে নজর দেব।’
সাংবাদিকেরা মাহিকে প্রশ্ন করেন, অনেকেই বলছে নির্বাচনের পর আপনাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এ প্রসঙ্গে মাহি বলেন, ‘ভবিষ্যদ্বাণী কে করে ফেলল, কেন করল আমি বুঝলাম না। আমি সিনেমা থেকে মোটামুটি অনেক দূরে চলে এসেছি আমার এই রাজনীতির কারণে। আমি জনগণের কাছাকাছি থাকতে চাই। এখানে যাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বী আছেন, তাঁরা সবাই ঢাকায় যান। চার-পাঁচ দিন করে থাকেন। যেহেতু ঢাকায় আমার কর্মক্ষেত্র, সপ্তাহে হয়তোবা দু-তিন দিন আমাকে যেতেই হবে। কিন্তু একটা বড় সময় আমি এখানেই থাকব। জনগণের কাছেই থাকব। এই মুন্ডুমালার উত্তর পাড়ায় আমার বাড়ি।’
মাহি তাঁর নির্বাচনী ইশতেহারের ১৭টি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে তিনি নির্বাচিত হলে বৈষম্য দূর করে মানুষের সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করবেন। নির্বাচনী এলাকায় তিনি বৃহৎ আকারে পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠা করতে চান। তিনি এলাকায় সবজি ও ফল সংরক্ষণে হিমাগার প্রতিষ্ঠা ও কৃষিপণ্য রপ্তানিমুখী করার ব্যবস্থা করবেন। নির্বাচনী এলাকায় শতভাগ খাওয়ার পানি ও গভীর নলকূপ স্থাপন করে সেচব্যবস্থায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন করবেন। তরুণ ও নারীদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ প্রদান করে আউটসোর্সিংসহ বিভিন্ন পন্থায় কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করবেন। নির্বাচনী এলাকায় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেবেন।