লাশ উত্তোলন করতে এসে পরিবারের বাধায় ফিরে গেলেন ম্যাজিস্ট্রেট-পুলিশ

ম্যাজিস্ট্রেট–পুলিশ যুবদল নেতা ফোরকান আলীর লাশ তুলতে গেলে তাঁর পরিবার বাধা দেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার খোট্টাপাড়া ইউনিয়নের ঘাসিড়া সুফিপাড়া গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

বগুড়ার শাজাহানপুরে যুবদল নেতা ফোরকান আলী হত্যা মামলার তদন্ত কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার জন্য আদালতের নির্দেশে লাশ উত্তোলন করতে এসে পরিবারের বাধায় ফিরে এসেছেন ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ। এর আগে এই হত্যা মামলার তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত করার জন্য ৫ নভেম্বর পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন করেন ফোরকানের বাবা আবদুল কুদ্দুস। পরে ২৪ নভেম্বর বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (শাজাহানপুর) মেহেদী হাসানের আদালতে ১৭৬ ধারায় আবেদন করেন। তবে আদালত এখন পর্যন্ত গ্রহণ করেননি বলে জানা গেছে।

১ নভেম্বর বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (শাজাহানপুর) আমলি আদালতে শাজাহানপুর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইউনুস আলী বাদী হয়ে এই হত্যা মামলা করেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সাজেদুর রহমান, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা নুরুজ্জামানসহ ১৬০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৪০০–৫০০ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ফোরকানকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ আনা হয়।

মামলায় ফোরকানকে ‘গুলি করে হত্যা’র কথা বলা হলেও গুলির কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে তাঁর বাবা আবদুল কুদ্দুস দাবি করেন। তিনি পুলিশ সুপার ও আদালতে দেওয়া আবেদনে অভিযোগ করেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধাওয়ায় ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে তাঁর ছেলে ফোরকান আলীর হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয়েছে। এ মৃত্যুতে কারও প্রতি অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই ফোরকানকে দাফন করা হয়। অথচ পরিবারকে না জানিয়ে বা কোনো প্রকার আলাপ-আলোচনা না করেই ইউনুস আলী চাঁদাবাজির উদ্দেশ্যে আদালতে হত্যা মামলা করেছেন। আদালতে মামলা করার পর থেকেই বাদী ইউনুস আলী আসামিদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি এমনকি অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে অনেককে মামলায় ফাঁসানোর ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায় করছেন।

আবদুল কুদ্দুস বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার খোট্টাপাড়া ইউনিয়নের ঘাসিড়া সুফিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর ছেলে নিহত ফোরকান আলী ওই ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক ছিলেন। সেই সঙ্গে বেসরকারি সংস্থা টিএমএসএসের একটি কারখানার কর্মী ছিলেন।

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার নিহত যুবদল নেতা ফোরকান আলী
ছবি: সংগৃহীত

আজ দুপুর পৌনে ১২টার দিকে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদমান আকিবের নেতৃত্বে শাজাহানপুর থানা-পুলিশ ঘাসিড়া গ্রামে ফোরকানের লাশ উত্তোলন করতে যান। এ সময় তাঁর বাবা আবদুল কুদ্দুসসহ পরিবারের সদস্যরা লাশ উত্তোলনে আপত্তি জানান। আবদুল কুদ্দুস নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে জানান, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের লক্ষ্যে গণ-আন্দোলন চলাকালে ২০২৩ সালের ৩ ডিসেম্বর অবরোধ চলাকালে মিছিলে গিয়ে পুলিশ-বিজিবির তাড়া খেয়ে তাঁর ছেলে ফোরকান আলী হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তাঁর ছেলেকে কেউ হত্যা করেননি। অথচ খোট্টাপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইউনুস আলী বাদী হয়ে আদালতে হত্যা মামলা করেছেন। মামলার বাদী ও সাক্ষী কাউকে চেনেন না তাঁরা। হত্যার ঘটনা না হওয়ায় ফোরকান আলীর লাশ কবর থেকে উত্তোলনে আপত্তি জানিয়ে ১৭৬ ধারায় আদালতে আবেদনের প্রক্রিয়া চলছে। আদালতে বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কবর থেকে লাশ উত্তোলনে পরিবারের আপত্তি আছে।

লাশ উত্তোলনে পরিবারের বাধা পেয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদমান আকিব। তিনি বলেন, ‘আদালতের নির্দেশেই আমরা ফোরকান আলীর লাশ উত্তোলন করতে এসেছি। পরিবারের লোকজন সময় চেয়েছেন, তাঁরা মামলার পক্ষভুক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করবেন। মৃত্যুর সঠিক কারণও আদালতকে অবহিত করবেন। পরিবারের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে এবং উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আপাতত লাশ না উত্তোলন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

ফোরকানের ছোট ভাই ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাই খোট্টাপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক ছিলেন। হৃদ্‌রোগে মৃত্যু হওয়ায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই পারিবারিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লাশ দাফন করা হয়েছে। মামলার বাদী ইউনুস আলী আমাদের কোনো আত্মীয় নন, সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সব সময় আমার ভাইয়ের বিরোধিতা করেছেন তিনি। অথচ পরিবারের সঙ্গে কোনো প্রকার আলাপ-আলোচনা না করে বা ন্যূনতম জানানোর প্রয়োজন মনে না করেই ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সুযোগে ইউনুস আলী বিভিন্ন ব্যক্তির নামে ঢালাও মামলা করেছেন। মামলাকে পুঁজি করে তিনি এবং মামলার সাক্ষী শফিকুল ইসলাম ও জিল্লুর রহমান এখন চাঁদাবাজি করছেন। মামলার তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত করার জন্য আমার বাবা আদালতে ১৭৬ ধারায় আবেদন করেছেন।’

তবে মামলার বাদী ও শাজাহানপুর উপজেলা যুবদলের নেতা ইউনুস আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্তেই এই মামলা করা হয়েছে। নেতাদের নির্দেশ মেনে আমি বাদী হয়েছি।’