গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনের প্রচারণা শেষ হচ্ছে আজ রাত থেকে
মাত্র এক দিন পর ৪ জানুয়ারি গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের উপনির্বাচন (পুনর্ঘোষিত) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আজ সোমবার রাত ১২টা থেকে প্রচারণা শেষ হয়ে যাচ্ছে। এখন শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় প্রার্থীরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তাঁরা ভোট চাওয়ার পাশাপাশি দোয়া চাইছেন।
উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী পাঁচজন প্রার্থী হলেন আওয়ামী লীগের মাহমুদ হাসান, জাতীয় পার্টির (জাপা) গোলাম শহীদ, বিকল্পধারার জাহাঙ্গীর আলম, স্বতন্ত্র নাহিদুজ্জামান ও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।
আজ সোমবার সকালে সরেজমিনে নির্বাচনী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শীত উপেক্ষা করে চায়ের স্টলে চলছে ভোট নিয়ে আড্ডা। এদিকে চলছে প্রার্থীদের মাইকিং। পোস্টারে পোস্টারে এলাকা ছেয়ে গেছে। তবে এই উপনির্বাচন নিয়ে মূল আলোচনায় একটা প্রশ্ন ঘুরেফিরেই আসছে, গত ১২ অক্টোবরের নির্বাচনের মতো আবার হবে না তো! আবার সিসিটিভি দেখে নির্বাচন কমিশনকে ভোট বন্ধ করতে হবে না তো!
স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন পর্যন্ত প্রচার-প্রচারণায় নৌকার প্রার্থী এগিয়ে। শেষের দিকে মাঠে নেমে লাঙ্গলের প্রার্থীও বেশ সরব। এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান উপনির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। মোট পাঁচজন প্রার্থীর মধ্যে চারজন এখন নির্বাচনী মাঠে। তাঁদের মধ্যে নৌকা ও লাঙ্গলের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে স্থানীয়ভাবে আলোচনা হচ্ছে।
চার প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ হাসান গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর প্রচারণা শুরু করেন। সেই থেকে তিনি প্রতিদিন গণসংযোগ চালাচ্ছেন। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি, এমনকি ফসলের জমিতেও দেখা করছেন। কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। মাহমুদ হাসান সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ উপনির্বাচনের আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘নৌকায় ভোট দিলে দেশের উন্নয়ন হয়। আশা করি ৪ জানুয়ারি ভোটাররা নৌকাকে বিজয়ী করবেন।’
জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী গোলাম শহীদও ভোটারদের দরজায় দরজায় ঘুরছেন। গণসংযোগ চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘৪ জানুয়ারির উপনির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে ইসি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। সেই আশা নিয়েই মাঠে আছি। উপনির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হলে বিজয়ী হব বলে আমি আশাবাদী।’
বিকল্পধারার প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ মাহবুবুর রহমানকে প্রচার-প্রচারণায় কম দেখা যাচ্ছে। যদিও পোস্টার-ব্যানারে তাঁদের ভোট চাইতে দেখা যাচ্ছে। জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, এ নির্বাচনের দিকে সাঘাটা, ফুলছড়ি উপজেলাসহ দেশবাসী তাকিয়ে আছে। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রশাসনকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে।
এদিকে প্রার্থীদের ভোট বর্জন ও ১২ অক্টোবরের মতো উপনির্বাচন মাঝপথে বন্ধ হওয়া নিয়ে ভোটারদের সন্দেহ এখনো কাটেনি। আজ ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার অন্তত ৪২ জন ভোটারের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা পুনর্ঘোষিত ৪ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন পেশার মানুষ মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
পুনর্ঘোষিত এ উপনির্বাচনে সাঘাটা ও ফুলছড়ির বাইরের অন্য উপজেলা থেকে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ উপনির্বাচনেও ইভিএম ও সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে।
ফুলছড়ি উপজেলার মদনের পাড়া এলাকার স্কুলশিক্ষক মজনু মিয়া বলেন, ১২ অক্টোবরের উপনির্বাচনে সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখে নির্বাচন বন্ধ করার নজির সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় ৪ জানুয়ারির নির্বাচন যেন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হয়, সেটাই ভোটারদের আশা।
একই এলাকার ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘১২ অক্টোবরের উপনির্বাচন মাঝপথে ভোট বর্জন ও উপনির্বাচন স্থগিতের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে এবারও ভোটারদের মধ্যে সন্দেহ আছে। এবার যেন গতবারের পুনরাবৃত্তি না ঘটে। সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হোক, এটাই আমাদের চাওয়া।’
উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ঢাকা বিভাগের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে এবার ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমান বলেন, সন্দেহের কোনো কারণ নেই। ৪ জানুয়ারির নির্বাচনে দুই উপজেলা নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে। চরাঞ্চলে নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার থাকবে। উপনির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আবদুল মোত্তালিব বলেন, পুনর্ঘোষিত এ উপনির্বাচনে সাঘাটা ও ফুলছড়ির বাইরের অন্য উপজেলা থেকে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ উপনির্বাচনেও ইভিএম ও সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে।
এখানকার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী গত ২৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এরপর আসনটি শূন্য ঘোষণা করে গত বছরের ১২ অক্টোবর উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন। ১২ অক্টোবর সকাল আটটায় উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। দুপুরে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মোট পাঁচজন প্রার্থীর মধ্যে চারজন ভোট বর্জন করেন। এরপর সিসিটিভি ক্যামেরায় অনিয়ম দেখে সিইসি প্রথমে ৫১টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত এবং পরে উপনির্বাচন বন্ধ করেন। অনিয়মের তদন্তে পরদিন ১৩ অক্টোবর বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়। কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর পুনরায় ৪ জানুয়ারি উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়।