উৎপাদন এলাকায় কাঁচা মরিচের পাইকারি দাম কমে অর্ধেক, খুচরায় এখনো ঝাঁজ
দেশে সবজির বড় একটা অংশ যায় বগুড়ার মহাস্থান হাট থেকে। পাইকারি এই হাটে ভালো মানের দেশি কাঁচা মরিচের দাম এক দিনের ব্যবধানে অর্ধেক কমে শনিবার প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর মধ্যম মানের কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৪০ টাকা দরে।
এক দিন আগে শুক্রবার মহাস্থান হাটে পাইকারি পর্যায়ে ভালো মানের কাঁচা মরিচের দাম ছিল প্রতি কেজি ১২০ ও মধ্যম মানের ১০০ টাকা। হাটে কাঁচা মরিচের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমেছে বলে জানিয়েছেন আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা।
তবে শহরের খুচরা বাজারে কাঁচা মরিচের দামে ঝাঁজ এখনো কমেনি। মহাস্থান হাটে চাষিদের ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা এক কেজি কাঁচা মরিচ শনিবার বগুড়া শহরের ফতেহ আলী ও কলোনী বাজারে খুচরা ক্রেতাদের কিনতে হয়েছে ১৬০ ও ১৮০ টাকায়।
গতকাল শনিবার মহাস্থান হাটে গিয়ে দেখা যায়, প্রচুর কাঁচা মরিচ উঠেছে। খেত থেকে কাঁচা মরিচ তুলে সাতসকালে হাটে বিক্রি করতে এসেছেন স্থানীয় চাষিরা। এ ছাড়া গাইবান্ধা, রংপুর, নওগাঁ, জয়পুরহাট থেকে আসা কৃষক ও ব্যাপারীরা কাঁচা মরিচ বিক্রি করছিলেন পাইকারি এ হাট।
সকালের দিকে ভালো মানের দেশি কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ৭০ টাকা ও মধ্যমা মানের ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। বেলা যত বেড়েছে, মরিচের জোগানও বেড়েছে, কমেছে দাম। দুপুর ১২টার পর ভালো মানের কাঁচা মরিচ ৫০-৬০ ও মধ্যম মানের ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হয়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, অনাবৃষ্টির কারণে এবার কাঁচা মরিচের চাষাবাদ বিলম্বিত হয়েছে। এতে সময়মতো খেত থেকে কাঁচা মরিচ ওঠেনি। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। সরবরাহ কমে যাওয়ায় বেশ কিছুদিন ধরে কাঁচা মরিচের দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী। তবে চার দিন ধরে কাঁচা মরিচের দাম কমতে শুরু করে।
শনিবার দুপুরের কড়া রোদে মহাস্থান হাটে দেশি কাঁচা মরিচ বিক্রি করতে বসেন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামারদহ গ্রামের কৃষক আফাজ উদ্দিন (৬০)। কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে ক্রেতার আশায় দুপুর পর্যন্ত বসে ছিলেন তিনি। দুপুরের দিকে হাটের পাইকার নুরুন্নবী প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম হাঁকেন ৫০ টাকা। আর কৃষক আফাজ চান ৭০ টাকা। শেষে ৬০ টাকায় রফা হয়।
আফাজ উদ্দিন বলেন, ‘শুক্রবার এই হাটত এক কেজি পত্তা (কাঁচা মরিচ) বেচনু ১২০ টেকা দরত, আজ আর হাটত পত্তা বেচনু ৬০ টেকায়।’
মহাস্থান হাট থেকে ট্রাকভর্তি কাঁচা মরিচ যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শ্যামবাজার, মিরপুর কাঁচাবাজার ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লা ও ফেনীর পাইকারি আড়তে। কাঁচা মরিচের দাম কমায় লোকসান হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মহাস্থান হাটে কাঁচা মরিচের ব্যাপারী শিবগঞ্জ উপজেলার উথলি গ্রামের মিনাদুল ইসলাম (৪০)।
তিনি বলেন, ‘গেল বৃহস্পতিবার কৃষকের খেতত থ্যাকে ১৩৫ টেকা কেজি দরে ২৬ মণ কাঁচা মরিচ কিনে লিয়ে আসে এই হাটত ব্যাচনো ১০০ টেকা কেজি দরত। শুক্রবার খেত থ্যাকে ১২০ টেকা কেজির ২০ মণ কাঁচা মরিচ কিনচি। শনিবার ব্যাচনো ৬০ টেকা দরত। তিন দিনে লাখ টেকা লোকসান।’
এদিকে শনিবার বগুড়া শহরের ফতেহ আলী বাজারের খুচরা দোকানে এক কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকা কেজি দরে। অন্যদিকে কলোনী বাজারের খুচরা ক্রেতাদের কাঁচা মরিচ কিনতে হয়েছে ১৮০ টাকায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফতেহ আলী বাজারের সবজির খুচরা ব্যবসায়ী মতিউর রহমান বলেন, মহাস্থান হাট থেকে কেনা সবজি পরদিন সকালে পাইকারি বিক্রি হয় শহরের রাজাবাজারে। এরপর তা আসে খুচরা দোকনে। মহাস্থানে কাঁচা মরিচের দাম কমলে এক দিন পর খুচরা পর্যায়েও কমবে।
এদিকে খুচরা বাজারে বেড়েছে বেগুন ও শসার দামও। শুক্রবার ফতেহ আলী বাজারে এক কেজি বেগুন বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা দরে। প্রতি কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে শনিবার বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা কেজি দরে। এক দিন আগে শহরের বাজারে হাইব্রিড শসা ও দেশি শসা বিক্রি হয়েছে যথাক্রমে ৬০ ও ১২০ টাকা কেজি। শনিবার প্রতি কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০ ও ১৪০ টাকা দরে।
কমেছে ডিমের দাম
বগুড়ায় মুরগির লাল ডিমের দাম পাইকারি আড়তে কমেছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর তদারকি জোরদার করায় সুফল এসেছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা।
বেশি দামে ডিম বিক্রি করায় শনিবারও শহরের আড়তে অভিযান পরিচালনা করে ৫ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রায় ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
বগুড়া শহরের রাজাবাজারে (রেললাইন বাজার) রয়েছে ডিমের ছয়-সাতটি পাইকারি আড়ত। শনিবার পাইকারি এ বাজারে লেয়ার মুরগির ডিম প্রতি হালি ৩৬ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি সাদা কক মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে প্রতি হালি ৩৪ টাকা দরে। তবে শহরের মুদিদোকানগুলোতে এখনো লেয়ার মুরগির ডিম প্রতি হালি ৪৫ টাকা, সাদা ডিম ৪৪ টাকা ও হাঁসের ডিম ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।