‘আমরা প্রার্থীরাও শঙ্কামুক্ত নই’

গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন উপলক্ষে প্রার্থী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা। বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে
ছবি: প্রথম আলো

‘১২ অক্টোবরের উপনির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। তাই আমরা চারজন প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছিলাম। সে কারণে ৪ জানুয়ারির উপনির্বাচনে জনগণ আস্থা পাচ্ছে না। আমরা প্রার্থীরাও শঙ্কামুক্ত নই। আজকে নির্বাচন কমিশনার নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। সেই আশা নিয়েই আমরা প্রচারণা চালাচ্ছি।’

আগামী ৪ জানুয়ারি গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে প্রার্থী, ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা। আজ বুধবার দুপুর ১২টায় জেলা প্রশাসক সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী গোলাম শহীদ উপরিউক্ত কথাগুলো বলেন।

সভায় বিকল্পধারার প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ উপনির্বাচনের দিকে সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলাসহ দেশবাসী তাকিয়ে আছে। এ উপনির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য প্রশাসনকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ হাসান বলেন, ‘কোনো প্রার্থীর মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্যে প্রভাবিত হয়ে এ উপনির্বাচনে যাতে বিঘ্ন ঘটানো না হয়, সে জন্য নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকার অনুরোধ জানাই। এ ছাড়া সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে কেউ যাতে আমার বিরুদ্ধে কোনো অপপ্রচার চালাতে না পারে, সেটি দেখার জন্যও আহ্বান জানাই।’ এই তিনজন ছাড়া এ উপনির্বাচনে নাহিদুজ্জামান ও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

আরও পড়ুন

গত ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণের মাঝপথে নির্বাচন বন্ধ করে দেয় ইসি। ভোট চলাকালে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে ৫১টি ভোটকেন্দ্রে ব্যাপক অনিয়ম দেখতে পেয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটি ৫১টি কেন্দ্রের ঘটনা তদন্ত করে ২৭ অক্টোবর ইসিকে প্রতিবেদন দেয়। পরে বাকি ৯৪ কেন্দ্রে অনিয়ম ছিল কি না, তা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয় ইসি। কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর নতুন করে ৪ জানুয়ারি উপনির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখ ঘোষণা করা হয়।

আজ দুপুরে মতবিনিময় সভায় নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেন, ১২ অক্টোবরের উপনির্বাচনে যেভাবে কাউকে ছাড় দেওয়া হয়নি, এ উপনির্বাচনেও ছাড় দেওয়া হবে না।

সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমান। এ সময় উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ঢাকা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম, গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মো. কামাল হোসেন, রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জি এম সাহাতাব উদ্দিনসহ প্রার্থীরা বক্তব্য দেন।

উপনির্বাচনে নতুন নিয়োগ করা প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের সঙ্গেও মতবিনিময় সভা করেন রাশেদা সুলতানা
ছবি: প্রথম আলো

প্রার্থীদের উদ্দেশে রাশেদা সুলতানা বলেন, সব পক্ষকে ভোট গ্রহণের পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যাতে ভোটারদের মাঝে আস্থা তৈরি হয়। প্রচার ও প্রচারণায় আচরণবিধি মেনে চলতে হবে। ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

এবারও সব কেন্দ্রে ইভিএম ও সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে উল্লেখ করে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ১২ অক্টেবরের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে দেওয়া হবে না। এ জন্য নির্বাচন কমিশন কঠোর অবস্থানে থাকবে। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এক প্রার্থীর অভিযোগ ছিল। পাঁচজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এবারও পুলিশকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া থাকবে।

গাইবান্ধা-৫ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এবং জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী ২৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এরপর আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।

আরও পড়ুন

পুনরায় ঘোষিত এ উপনির্বাচনে ১৪৫টি কেন্দ্রে আগের প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের আর দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না। সাঘাটা ও ফুলছড়ি বাদে জেলার অন্য পাঁচটি উপজেলা থেকে ১৪৫টি কেন্দ্রে ১৪৫ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এদিকে বেলা একটা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে নতু প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন। এ সময় নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন কয়েকজন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গাইবান্ধা সদর উপজেলা থেকে আসা এক প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বলেন, ‘১২ অক্টোবরের উপনির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের দোষ ছিল না। তাঁরা দলীয় প্রভাবশালীদের কাছে অসহায় ছিলেন। উল্টো তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমরা ৪ জানুয়ারির উপনির্বাচনে দায়িত্ব পালন নিয়েও শঙ্কা বোধ করছি। এরপরও দায়িত্ব পালন করব।’

আরও পড়ুন

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একই উপজেলার আরেকজন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বলেন, ‘সাধারণত নিজের এলাকায় যেকোনো দায়িত্ব পালনে সাহসী থাকা যায়। কিন্তু এবার আমরা অন্য এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছি। চাকরির কারণে সরকারের নির্দেশনা অমান্য করতে পারছি না।’

তবে মতবিনিময় সভায় তাঁদের আশ্বস্ত করেন গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমান। তিনি বলেন, শঙ্কার কোনো কারণ নেই। ৪ জানুয়ারির নির্বাচনে দুই উপজেলা নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে। চরাঞ্চলে নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার থাকবে। উপনির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।

প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের শঙ্কা প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আপনারা সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন। আপনারা কাউকে ভয় পাবেন না। আপনাদের লোভের ঊর্ধ্বে থেকে দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হবে। এ থেকে আপনি আমি কেউ পালাতে পারব না।’