বছরে তিন শতাধিক খেজুরগাছের রস সংগ্রহ করেন আকবর আলী
বাঁশের তৈরি বিশেষ আকৃতির একটি ঝুড়ির মধ্যে ধারালো দা, হাঁসুয়া ও কাস্তে ভরে কোমরের সঙ্গে বেঁধে তরতর করে খেজুরগাছ বেয়ে উঠলেন আকবর আলী। গাছে ওঠার পর দেখা গেল, কোমরের সঙ্গে আরও দুটি দড়ি ঝুলছে। একটি দড়ি নিজের শরীর ও গাছের সঙ্গে পেঁচিয়ে নিলেন। আরেকটি দিয়ে একখণ্ড শক্ত কাঠ খেজুরগাছের সঙ্গে বেঁধে তার ওপর পা দিয়ে দাঁড়ালেন। এরপর নিপুণ হাতে খেজুরগাছের ডালপালা পরিষ্কার ও গাছের উপরিভাগে ধারালো দা দিয়ে ছিলে রাখতে শুরু করলেন। এভাবে তিনি কোনো সহযোগী ছাড়াই বছরে তিন শতাধিক খেজুরগাছ পরিচর্যা করে রস সংগ্রহ করেন।
আকবর আলীর বাড়ি খুলনার সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রা উপজেলার গোবরা গ্রামে। বছরের অন্য সময় দিনমজুরির কাজ করলেও শীত মৌসুমে গাছির কাজ করেন। এ সময় গ্রামের অধিকাংশ মানুষের খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন তিনি। আজ শুক্রবার গোবরা গ্রামের গাজী বাড়ি খেজুরবাগানে গিয়ে দেখা হয় আকবর আলীর সঙ্গে। সেখানে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ বেশ ঝক্কি–ঝামেলার কাজ। আগে গ্রামের অনেকের খেজুরগাছ টাকার বিনিময়ে কেটে রস সংগ্রহ করে দিতাম। কিন্তু কয়েক বছর ধরে টাকা নিই না, খেজুরগাছের ডালপালা ও রসের ভাগের বিনিময়ে গাছ কাটি।’
গাছ একবার ছাঁটলে তিন-চার দিন রস সংগ্রহ করা যায়। পরে তিন দিন শুকাতে হয়। এভাবে কাটলে গাছের রস আরও বেশি মিষ্টি হয়। রস সংগ্রহ তাঁর মৌসুমি আয়ের পথ। অন্য সময় দিনমজুরির কাজ করেন।
আকবর আলীর বাড়ি খুলনার সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রা উপজেলার গোবরা গ্রামে। বছরের অন্য সময় দিনমজুরির কাজ করলেও শীত মৌসুমে গাছির কাজ করেন। এ সময় গ্রামের অধিকাংশ মানুষের খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন তিনি। আজ শুক্রবার গোবরা গ্রামের গাজী বাড়ি খেজুরবাগানে গিয়ে দেখা হয় আকবর আলীর সঙ্গে। সেখানে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ বেশ ঝক্কি–ঝামেলার কাজ। আগে গ্রামের অনেকের খেজুরগাছ টাকার বিনিময়ে কেটে রস সংগ্রহ করে দিতাম। কিন্তু কয়েক বছর ধরে টাকা নিই না, খেজুরগাছের ডালপালা ও রসের ভাগের বিনিময়ে গাছ কাটি।’
গাছি আকবর আলীর রোদে পোড়া শরীরটা বেশ জীর্ণশীর্ণ। ঠোঁটের কোণে লেগে আছে হাসি। কাজের ফাঁকে কথা বলতে নেই কোনো বিরক্তি। ৫০ বছর বয়সী এই শ্রমজীবী বললেন, আগে আরও অনেকে মিলে এ কাজ করতেন। তখন এলাকায় প্রচুর খেজুরগাছ ছিল। বর্তমানে খেজুরগাছ কমে গেছে। এ কারণে অধিকাংশ লোক এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। এখন দু-একজন গাছি এ কাজ করছেন।
আকবর আলীর ভাষ্য, সাধারণত পৌষ, মাঘ ও ফাল্গুন রসের মৌসুম। প্রচণ্ড শীত হলে রসের চাহিদা বাড়ে এবং রসও ভালো থাকে। বিভিন্ন এলাকার মানুষ সকাল সকাল তাঁর কাছে চলে আসেন রস কিনতে। পিঠা, পায়েস প্রভৃতি তৈরির জন্য রস কেনেন বাড়ির গৃহিণীরাও। গত বছর প্রায় ৪০ হাজার টাকার রস বিক্রি করেছিলেন। খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে হলে প্রথমে গাছের মাথার অংশ ভালো করে পরিষ্কার করতে হয়। এরপর পরিষ্কার সাদা অংশ হালকা কেটে বাঁশের তৈরি নল লাগানো হয়। সেখানে বিশেষ কায়দায় টানানো হয় ছোট-বড় প্লাস্টিকের বোতল। সারা রাত টুপ টুপ করে রস পড়ে জমা হয় বোতলে। আবার কাকডাকা ভোরে গাছ থেকে রসের বোতল নামিয়ে আনা হয়। কিছু রস বিক্রি হয়, বাকিটা দিয়ে গুড় তৈরি করে বিক্রি করা হয়।
গোবরা গ্রামের খেজুরবাগানের মালিক কামরুল ইসলাম বলেন, তাঁদের বাগানে ১২০টি খেজুরগাছ আছে। চার বছর ধরে শীত মৌসুমে আকবর আলী তাঁদের গাছ কেটে রস আহরণের জন্য প্রস্তুত করেন। গাছের ডালপালা সব গাছি নেন। আর গাছ থেকে রস নামিয়ে অর্ধেক গাছি আকবর আলী নেন আর অর্ধেক পান তিনি। এতে উভয়ের কোনো টাকা খরচ হয় না।
আকবর আলী বলেন, গাছ একবার ছাঁটলে তিন-চার দিন রস সংগ্রহ করা যায়। পরে তিন দিন শুকাতে হয়। এভাবে কাটলে গাছের রস আরও বেশি মিষ্টি হয়। রস সংগ্রহ তাঁর মৌসুমি আয়ের পথ। অন্য সময় দিনমজুরির কাজ করেন।
গোবরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘একসময় আমাদের গ্রামে অনেক খেজুরগাছ দেখা যেত। প্রচুর রস কিনতে পাওয়া যেত। কিন্তু এখন গাছি আকবর আলীর বাড়িতে ছাড়া রস পাওয়া যায় না। চাহিদা বেশি থাকায় সবাইকে দিতে পারেন না তিনি। পেশাদার গাছির সংখ্যা কমে গেছে। সরকারি সড়কের দুই পাশে যদি পরিকল্পিতভাবে খেজুরগাছ লাগানো হয়, তাহলে প্রতিবছর খেজুরের গুড় বিক্রি করে সরকার অনেক টাকা রাজস্ব আয় করতে পারবে। খেজুরগাছ লাগানোর উদ্যোগ সরকারিভাবেই নেওয়া উচিত।’