রাজশাহীতে গান-নৃত্যে, খেলাধুলায় মাতল বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা
আলোচনা সভা শেষেই বেলুন ওড়ানো হলো আকাশে। অতিথিদের সঙ্গে সেই বেলুন ওড়ানোতেই আনন্দে আত্মহারা শিশুরা। এরপরই কয়েকজন শিশুশিক্ষার্থী গানের তালে তালে নাচল। মনোমুগ্ধকর সেই নাচ শেষে শোনা গেল সবার করতালি।
রাজশাহীতে বার্ষিক ক্রীড়া কর্মসূচি ২০২৪-২৫ এর আওতায় জেলা শিশু একাডেমিতে আজ বেলা ১১টার দিকে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের ক্রীড়া আনন্দ উৎসবের আয়োজন করা হয়। জেলা প্রশাসন ও জেলা ক্রীড়া কার্যালয়ের সহযোগিতায় এই আয়োজনে রাজশাহী জেলার পাঁচটি বিদ্যালয়ের প্রায় ১০০ জন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু অংশগ্রহণ করে। এ সময় অতিথিদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক ও অভিভাবকেরা।
সকাল ১০টায় রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) টুকটুক তালুকদার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন। স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা গৌতম কুমার সরকার। এ ছাড়া আরও বক্তব্য দেন জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রতিবন্ধীবিষয়ক কর্মকর্তা মীর শামীম আলী। শুভেচ্ছা দেন জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা মনজুর কাদের।
প্রধান অতিথি টুকটুক তালুকদার বলেন, ‘সমাজে অনেকেই মনে করেন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্মই হয়েছে পাপের ফল হিসেবে। কিন্তু সেটা নয়, সৃষ্টিকর্তা ভালোবেসে এই শিশুকে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন। এই শিশুকে যত্ন করতে হয়, নিজের কাজ নিজে করতে পারে না। এখানে যেসব অভিভাবক আছেন, তাঁরা সবাই তাঁদের এই শিশুকে ভালোবাসেন। আর ভালোবাসেন বলেই তাদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন, এখানে নিয়ে এসেছেন। এই শিশুদের যাঁরা পড়ান, তাঁরাও খুব ধৈর্যের পরিচয় দেন। শিক্ষকেরাও মানবিক কাজ করে যাচ্ছেন। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের মধ্যে অনেকেরই প্রতিভা আছে।’
আলোচনা সভা শেষে খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। শিশু একাডেমির মাঠে শুরুতে রাজশাহী নগরের কাজলার রাজশাহী বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গানের সঙ্গে নৃত্যে অংশ নেয়। নাচ শেষে প্রাক্-প্রাথমিকের শেফা খাতুনকে সবাই উৎসাহ দেওয়া হয়। অংশ নেওয়া সবার সঙ্গে ছবি তোলেন অতিথিরা। এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জান্নাতুন নাহার আভা বলেন, তাঁদের বিদ্যালয়ের বাচ্চারা এখানে আসতে পেরে অনেক খুশি হয়েছে। তারা খুব আনন্দ পাচ্ছে।
রাজশাহী সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাহমিদ হোসাইন অনুষ্ঠানের ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’ পর্বে জুলাই আন্দোলনের মুগ্ধ সেজেছে। মাথায় জাতীয় পতাকার ব্যাজ পরিধান করা তাহমিদ বুকে কাগজে লিখেছে ‘মুগ্ধ...পানি লাগবে পানি লাগবে’। তাহমিদের মা শিল্পী খাতুন বলেন, ‘আবু সাঈদ ও মুগ্ধর এই ভিডিওগুলো দেখেছে তাহমিদ। এগুলো নিয়ে গান হয়েছে। সে বলেছে, আজ সে এগুলো করবে। সে খুব খুশি হয়েছে।’ তিনিও এই আয়োজনে খুব খুশি হয়েছেন।
শিশুদের অংশগ্রহণে আয়োজনে আরও ছিল ঝুড়িতে বল কুড়ানো, হালকা বল নিক্ষেপ, বয়স ও শারীরিক পরিস্থিতি অনুযায়ী ৫০, ৭৫ ও ১০০ মিটারের দৌড়। খেলা শেষে অংশ নেওয়া সব শিশুকে পুরস্কৃত করা হয় দুপুরে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ক্রীড়া পরিদপ্তরের সাবেক উপপরিচালক আখতারুজ্জামান রেজা তালুকদারসহ অন্যরা পুরস্কার তুলে দেন।