কুষ্টিয়ায় দুজনকে গুলি, আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি থেকে পিস্তল ও শটগান উদ্ধার
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় চায়ের দোকানে দুজনকে গুলি করার ঘটনায় ব্যবহৃত পিস্তল ও শটগান উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার দিবাগত গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ওই দুটি আগ্নেয়াস্ত্রের সঙ্গে গুলিও উদ্ধার করে। এই অভিযানে জেলা গোয়েন্দা ও মিরপুর থানা-পুলিশ অংশ নেয়।
শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে উপজেলার ফুলবাড়ী ইউনিয়নের শিমুলিয়া গ্রামে গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে। মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতাহার আলী পিস্তল দিয়ে গুলি ছুড়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় তাঁকেসহ দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। তবে এখনো তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি।
পুলিশ বলছে, গুলি ছোড়ার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত আতাহার আলীর বাড়িতে গভীর রাতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় আতাহারের দেওয়া তথ্য ও দেখানো জায়গা থেকে এসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। সেখান থেকে বেশ কয়েকটি গুলিও পাওয়া যায়। এসব অস্ত্র ও গুলি আতাহারের লাইসেন্স করা।
গুলিবিদ্ধ দুই ব্যক্তি হলেন উপজেলার ফুলবাড়ীর শিমুলিয়া এলাকার হাসেম গাজী (৫৫) ও বহলবাড়ি সাতবাড়িয়া এলাকার রেজাউল ইসলাম (৫০)। তাঁদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আমরা কৃষিকাজ করে সংসার চালাই। গত সংসদ নির্বাচনে আমিসহ আমার পরিবারের লোকজন আওয়ামী লীগ নেতা কামারুল আরেফিনের ট্রাক প্রতীকের পক্ষে নির্বাচন করি। এতে আতাহার ক্ষুব্ধ হন। বেশ কয়েকবার হামলাও চালানো হয়েছিল। বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। আজ আতাহার নিজে অস্ত্র নিয়ে এসে গুলি করেছেন। আমি এর বিচার চাই।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যার দিকে শিমুলিয়া গ্রামে স্থানীয় পল্টুর চায়ের দোকানে বসে কয়েকজন চা পান করছিলেন। সন্ধ্যা সাতটার দিকে আওয়ামী লীগ নেতা আতাহার ও তাঁর ভাতিজারাসহ ৩০-৪০ জন অস্ত্র নিয়ে পল্টুর চায়ের দোকানের সামনে যান। চায়ের দোকানে থাকা হাসেম গাজীর সঙ্গে তাঁদের বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে আতাহার তাঁর হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে পরপর পাঁচটি গুলি করেন। এতে সেখানে উপস্থিত লোকজন আতঙ্কিত হয়ে দৌড় দেন। এ সময় হাসেম ও ভ্যানচালক রেজাউল গুলিবিদ্ধ হন। দ্রুত তাঁদের উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে দুজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
কুষ্টিয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন, ক্রাইম ও মিডিয়া) পলাশ কান্তি নাথ প্রথম আলোকে বলেন, রাতেই আতাহার আলীকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একপর্যায়ে তিনি পিস্তল দিয়ে গুলি করার কথা স্বীকার করেন। আতাহার জানিয়েছেন এলাকার লোকজন তাঁকে মারার উদ্দেশ্যে ঘিরে ধরেন। প্রাণ বাঁচতে তিনি গুলি ছুড়েছেন। রাতেই তাঁকে নিয়ে তাঁর বাড়িতে যাওয়া হয়। বাড়িতে তাঁর দেখানো জায়গা থেকে একটি পিস্তল ও একটি শটগান উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে বেশ কয়েকটি তাজা গুলিও পাওয়া গেছে। দুটি অস্ত্রই তাঁর লাইসেন্স করা।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, এলাকায় পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। পরবর্তী সহিংসতা এড়াতে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। আতাহারের বিরুদ্ধে এর আগেও একটি মারামারিও মামলা হয়েছে। সেই মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতা আতাহার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুর পক্ষে কাজ করেছিলেন। এই আসনে জয়ী হন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামারুল আরেফিন।
আহত হাসেম গাজীর ভাতিজা সেন্টু গাজী বলেন, ‘আমরা কৃষিকাজ করে সংসার চালাই। গত সংসদ নির্বাচনে আমিসহ আমার পরিবারের লোকজন আওয়ামী লীগ নেতা কামারুল আরেফিনের ট্রাক প্রতীকের পক্ষে নির্বাচন করি। এতে আতাহার ক্ষুব্ধ হন। বেশ কয়েকবার হামলাও চালানো হয়েছিল। বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। আজ আতাহার নিজে অস্ত্র নিয়ে এসে গুলি করেছেন। আমি এর বিচার চাই।’