সাগর উত্তাল, টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌযান চলাচল বন্ধ
মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন বিকল্প নৌপথে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে সেন্ট মার্টিন থেকে পারিবারিক কাজে টেকনাফ ও কক্সবাজার শহরে গিয়ে আটকা পড়েছেন তিন শতাধিক মানুষ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সাগর উত্তাল থাকায় দুর্ঘটনা এড়াতে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনরায় নৌযান চলাচল শুরু হবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চলনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালীয়া খালে গিয়ে দেখা যায়, খালের পাড়ে সার্ভিস ট্রলারের টিকিট কাউন্টারে কোনো লোকজন নেই। পাশে কয়েকটি ট্রলার নোঙর করে রয়েছে। ট্রলারে মালামাল ওঠা-নামার কাজে নিয়োজিত কয়েকজন শ্রমিককে দেখা যায় পাশে একটি চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। তাঁদেরই দুজন আবদুস সালাম ও মোহাম্মদ হাসানের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় তাঁদের অলস সময় কাটছে। আয়রোজগার বন্ধ থাকায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম অনেক বেশি। এভাবে নৌযান চলাচল বন্ধ থাকলে সংসার চালানো কঠিন হয়ে যাবে।
স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও নৌযানের শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের কারণে টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার নিয়মিত নৌপথটিতে ৮ জুন থেকে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ৫ ও ৮ জুন ওই নৌপথের নাইক্ষ্যংদিয়া নামক এলাকায় মিয়ানমার সীমান্ত থেকে ট্রলার ও স্পিডবোট লক্ষ্য করে গুলি চালানোর ঘটনার পর নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গুলিতে কেউ হতাহত না হলেও সাতটি ট্রলারে গুলি লাগে। নিয়মিত নৌপথটিতে নৌযান চলাচল বন্ধ হওয়ার পর উপকূলীয় শাহপরীর দ্বীপের বদরমোকামের ‘গোলগরা’ এলাকা দিয়ে নৌযান চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়।
টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ বলেন, বিকল্প নৌপথটিতে সব সময় সাগর উত্তাল থাকে। যার কারণে নৌযান চলাচল বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। তবু সেই পথে নৌযান চলাচল করায় সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দাদের কিছুটা স্বস্তি ফিরেছিল। তিনি আরও বলেন, গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকল্প পথটিতেও নৌ চলাচল বন্ধ রয়েছে। এই নৌপথে ৪৭টি সার্ভিস ট্রলার চলাচল করে, যেখানে দেড় শতাধিক মাঝিমাল্লা নিয়োজিত রয়েছেন। আগামী পর্যটন মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই নিয়মিত নৌপথটি স্বাভাবিক না হলে সার্ভিস ট্রলারের মালিক এবং মাঝিমাল্লারা সংকটে পড়বেন।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার রাত থেকে সেন্ট মার্টিনে বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। সার্ভিস ট্রলার চলাচল দ্রুত স্বাভাবিক না হলে সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দারা খাদ্যসংকটে পড়বেন।
এদিকে সাগর উত্তাল থাকায় মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে অনেক জেলের। টেকনাফ উপকূলে সাগরপাড়ে গিয়ে দেখা যায়, শত শত নৌযান সারিবদ্ধভাবে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হয়েছে। এসব নৌযানের পাশে সমুদ্রসৈকতে বসে জাল মেরামত করছেন জেলেরা। কিছু নৌযানও মেরামত করতে দেখা যায়। সাবরাং মুন্ডার ডেইল এলাকার জেলে আবদুর রশিদ বলেন, এখন ইলিশের মৌসুম। তবু সতর্কসংকেতের কারণে সাগরে গিয়ে মাছ ধরা সম্ভব হচ্ছে না।
টেকনাফ উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, আবহাওয়ার কারণে সাগর উত্তাল হয়ে পড়ায় মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। তবে ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ প্রজনন মৌসুম হিসেবে নদী ও সাগরে মাছ ধরা ও বিক্রয় বন্ধ থাকবে।