লক্ষ্মীপুরে আওয়ামী লীগ-পুলিশ যৌথভাবে হামলা চালিয়েছে, অভিযোগ শহীদ উদ্দিনের
লক্ষ্মীপুরে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশ যৌথভাবে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে গুলি করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী (এ্যানি)। তিনি বলেন, হামলা চালিয়ে কৃষক দলের কর্মী সজিব হোসেনকে (৩২) কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাঁদের নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশ গুলি করেছে। এতে বিএনপির প্রায় ২০০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে লক্ষ্মীপুরের গোডাউন রোড এলাকার নিজ বাসভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেন শহীদ উদ্দিন চৌধুরী। সংবাদ সম্মেলনে তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া।
সংবাদ সম্মেলনে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশ নির্দয়ভাবে গুলি করেছে। দুজনের চোখে গুলি লেগেছে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হাসান মাহমুদ ইব্রাহিমকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে আমাদের নেতা-কর্মীরা চিকিৎসাধীন আছেন। সজিবকে হত্যার ঘটনায় মামলা করা হবে। যারা গুলিবিদ্ধ তাঁদের পক্ষ থেকেও মামলা করা হবে।’
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক বলেন, ‘বিএনপির মিছিল থেকে আমাদের কর্মসূচিতে হামলা করা হয়। আমাদের নেতা-কর্মীদের পিটিয়ে আহত করে বিএনপির লোকজন। বিএনপির দলীয় কোন্দলের কারণে তাঁদের একজন কর্মী নিহত হয়েছেন। ছাত্রলীগ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়।’
গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের ঝুমুর সিনেমা হল ও রামগতি সড়কের আধুনিক হাসপাতালের সামনে দফায় দফায় পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। ঘণ্টাব্যাপী চলা এই সংঘর্ষে পুলিশ ও বিএনপির অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।
সংঘর্ষ চলাকালে সজিব হোসেন (৩০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। তিনি চন্দ্রগঞ্জ থানা কৃষক দলের সদস্য ছিলেন। সজিব চরশাহী ইউনিয়নের নুরুল্লাপুর গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে। গতকাল রাতে স্বজনদের উপস্থিতিতে সদর হাসপাতালের মর্গে নিহত সজীবের লাশের সুরতহাল করে পুলিশ। আজ দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এদিকে সংঘর্ষ ও নিহত হওয়ার ঘটনায় আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। তবে পুলিশের পক্ষে দুটি মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন লক্ষ্মীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোসলেহ উদ্দিন । তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সংঘর্ষ ও পুলিশের ওপরে হামলার ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। ঘটনার পর থেকে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পুলিশ-র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী টহল দিচ্ছে।
ওসি আরও বলেন, বিএনপির পদযাত্রা থেকে পুলিশের ওপরে হামলা করা হয়। এতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সোহেল রানা, রামগতি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মইনুল হক, তিনিসহ ১৬ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
পুলিশ, বিএনপি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল বিকেল চারটার দিকে শহরের গোডাউন রোড এলাকার বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরীর বাসভবন থেকে পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু হয়। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে রামগতি সড়কের আধুনিক হাসপাতালের কাছে পদযাত্রাটিতে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে পদযাত্রা সামনের দিকে এগিয়ে যায়। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় জেলা শহরের ঝুমুর সিনেমা হল এলাকা, রামগতি সড়কের আধুনিক হাসপাতাল, মটকা মসজিদ এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন।