বালিয়াকান্দিতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ৯, গ্রেপ্তার ৩

সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছেছবি: প্রথম আলো

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদা চাওয়াকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ৯ জন আহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার রাতে উপজেলার সদর চৌরাস্তার মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আহত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার ভূঁইয়া, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মশিউল আযম, স্থানীয় বাসিন্দা জাহিদুল ভূঁইয়া, বিটু মোল্লা, রুবেল মোল্লা, লিটন শেখ, আরিফ শিকদার, ওসমান শেখ ও কামরুজ্জামান। মশিউল আযম, রুবেল ও জাহিদুলকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে এবং বাকিদের বালিয়াকান্দি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ ছাড়া সামান্য আঘাত পাওয়া ১৫ জন স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খালা রক্ষাকারী বাহিনী গতকাল মধ্যরাতে যৌথ অভিযান চালিয়ে বিএনপি নেতা মশিউল আযম (৫০), রুবেল মোল্লা (৩১) ও কামরুজ্জামানকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে।

বিএনপি নেতা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নাসিরুল হক ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে। নাসিরুল হকের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বালিয়াকান্দি উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মশিউল আযম। হারুন অর রশিদের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম শওকত সিরাজ ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার ভূঁইয়া। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এই দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।

উপজেলা বিএনপি নেতা গোলাম সরোয়ার ভূঁইয়া বলেন, ‘গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে সদর চৌরাস্তার মোড় থেকে মোটরসাইকেলে বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় মশিউল আযমের ছেলে শিবলু ও শোভনের নেতৃত্বে সাত থেকে আটটি মোটরসাইকেলে কয়েকজন এসে তাঁর পথরোধ করে দেড় লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে আমাকে মেরে আহত করেন। আমি সেক্রেটারি হওয়ার পর থেকে মশিউল আযম নানাভাবে হয়রানি করছেন। পাঁচ মিনিট পর মশিউল আযম উপস্থিত হয়ে একই সুরে কথা বললে আমি নিরুপায় হয়ে চলে আসি।’

গোলাম সরোয়ার ভূঁইয়া আরও বলেন, এ ঘটনার পর তাঁরা উপজেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম শওকত সিরাজের বাড়িতে আগুন দেন। এ সময় তাঁরা সংঘবদ্ধ হয়ে ধাওয়া দেন। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষে তিনিসহ ১৫ জন আহত হন। আহত পাঁচজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও জাহিদুল ভূঁইয়াকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ ঘটনায় গোলাম সরোয়ার ভূঁইয়া বাদী হয়ে বালিয়াকান্দি থানায় ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৭০ থেকে ৮০ জনকে আসামি করে চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা করেন। সেই মামলায় ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

মশিউল আযম গ্রেপ্তার থাকায় এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে তাঁর ভাই উপজেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি মনির আযম বলেন, বিএনপির দুই পক্ষের আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। চাঁদাবাজির অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।

উপজেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম শওকত সিরাজ বলেন, ‘শুক্রবার রাতে গোলাম সরোয়ার ভূঁইয়া বাজারে কেনাকাটা করার সময় চুন্নুর ছেলেরা আকস্মিকভাবে মারধর করেন। আমার বাড়ির দ্বিতীয় তলার দরজার সামনের পাপোশে আগুন ধরিয়ে দিলে সবাই মিলে আগুন নেভায়। আমি আমি বাড়ি ছিলাম না। আমার স্ত্রীসহ ভাড়াটেরা ভয়ে চিৎকার করতে থাকেন।’

বালিয়াকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন বলেন, গ্রেপ্তার মশিউল আযম ও রুবেল মোল্লা পুলিশি পাহারায় রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আর গ্রেপ্তার কামরুজ্জামান পুলিশ হেফাজতে আছেন।